কম্পপুরে মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী বখাটেকে ধরে পুলিশে দিলেন মা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার কথা শুনে ছুটে গিয়ে রাসেল খাঁ নামের এক বখাটে যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন মেয়েটির ক্ষুব্ধ মা। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই বখাটেকে জুতাপেটাসহ বেধড়ক মারধরও করেছে। ১৭ জানুয়ারি রাতে জামালপুর পৌরসভার কম্পপুর খাঁবাড়ি এলাকায় ওই মেয়েটির বাড়ির কাছেই এ ঘটনা ঘটে। মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে ১৮ জানুয়ারি জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে আটক বখাটেকে জেলহাজতে দিয়েছে পুলিশ। ধর্ষণ চেষ্টার শিকার মেয়েটির আইনগত সহায়তা প্রদানের দায়িত্ব নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘ।

অভিযোগে জানা গেছে, জামালপুর পৌরসভার কম্পপুর খাঁবাড়ি এলাকার দরিদ্র এক ইজিবাইকচালকের ১৪ বছরের মেয়ে স্থানীয় কে পি মডেল একাডেমি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়েটি প্রতিদিনের মতো ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাদের স্কুলে জেএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বিশেষ কোচিং ক্লাসে যায়। স্কুলটি তাদের বাড়ির কাছেই। ক্লাশ শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেয়েটি বাড়িতে ফিরছিলো।

বাড়ির ঠিক কাছাকাছি স্থান থেকে প্রতিবেশী দুই বখাটে নয়ন খাঁ ও রাসেল খাঁ মেয়েটিকে জোরপূর্বক রাস্তার পাশে ক্ষেতে নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। দুই বখাটের মধ্যে নয়ন খাঁ আগে থেকেই মেয়েটিকে উত্যক্ত করতো। মেয়েটি চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে রাসেল মুখচেপে ধরে, নয়ন ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং মারধর করে। এক পর্যায়ে মেয়েটি নিজেকে সামলে নিয়ে ছুটে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে জানায়। মা মেয়েকে নিয়ে সাথে সাথেই ফের ঘটনাস্থলে যান। মা-মেয়ে মিলে দুই বখাটের মধ্যে রাসেলকে শার্টের কলারে ধরে ফেলে এবং বখাটে নয়ন পালিয়ে যায়। রাগে ক্ষোভে মা-মেয়ে মিলে রাসেলকে ঝাপটে ধরে মারধর শুরু করে চিৎকার দেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ছুটে গিয়ে আটক রাসেলকে রাতেই মেয়েটির স্কুলে নিয়ে যায়। ঘটনা শুনে সবাই রাসেলকে জুতাপেটা করাসহ লাঠি দিয়ে পেটায়। পরে বিদ্যালয় থেকে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ সেখানে গিয়ে রাসেলকে আটক করে।

নির্যাতিতা মেয়েটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)খ ও ৩০ ধারায় মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা ও সহায়তা করার অভিযোগ এনে ১৮ জানুয়ারি সকালে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রতিবেশী মঙ্গল খাঁয়ের ছেলে নয়ন খাঁ (২১) এবং হাশেম খাঁয়ের ছেলে রাসেল খাঁকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার রাতে আটক রাসেলকে আদালতের মাধ্যমে জামালপুর জেলহাজতে পাঠিয়েছে সদর থানা পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার মেয়েটির মা বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, আমার মেয়েটা ফসকাইয়া যদি না আইতো তাইলে আইজকা কি অবস্থা হইতো অর। আমি ঐ দুই শয়তানের এমুন কঠিন শাস্তি চাই যাতে অরা জীবনের তরে একটা উচিৎ শিক্ষা পায়।

এ ঘটনায় পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছিমুল ইসলাম এ ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, মেয়েটির কাছ থেকে আমি বিস্তারিত ঘটনা শুনেছি। তাকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী দুই বখাটের মধ্যে রাসেল খাঁ নামের একজনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল বলেছে যে নয়ন তাকে সাথে থাকতে বলেছিল। মামলাটির প্রধান আসামি নয়ন খাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি উন্নয়ন সংঘের আইআইআরসিসিএল প্রকল্পের আওতায় ভিকটিমকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।