সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

প্রয়াত সাংবাদিক দুলাল হোসাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় পৌরসভার হাটচন্দ্রায় এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সাংবাদিক দুলাল হোসাইন সমাজ কল্যাণ সংস্থা।

সাংবাদিক দুলাল হোসাইন সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও চ্যানেল আই- এর জামালপুর প্রতিনিধি হাফিজ রায়হান সাদা।

সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের বড় ছেলে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জামালপুর প্রতিনিধি সাইমুম সাব্বির শোভনের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জামালপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান ডল, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মিন্টু, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম, ১০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার মাজহারুল ইসলাম শামীমসহ এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা।

এসময় বক্তারা গুণী এই সাংবাদিকের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এরপর সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করা হয়।

১৯৬৫ সালের ১০ ডিসেম্বর জামালপুর পৌর এলাকার হাটচন্দ্রা গ্রামে পিতা ইদ্রিস আলী এবং মাতা আনোয়ারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন দুলাল হোসাইন। তিনি পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান ছিলেন।

দুলাল হোসাইন ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। আর্থিক অভাবের কারণে লেখাপড়া ছেড়ে খুব কম বয়সে সংসারের হাল ধরেন তিনি।

তবে সম্মান ও সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছানোর আশায় হাজারও অভাবের পরেও ১৯৮২ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন দুলাল হোসাইন।

১৯৮২ সালে পাক্ষিক জামালপুর প্রবাহ। এরপর ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজকের স্মৃতি। জেলা প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ভোরের ডাকে কাজ শুরু করেন ১৯৮৮ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে দৈনিক সকালের খবর, ১৯৯৭ সালে দৈনিক সংবাদ এবং সর্বশেষ ২০০০ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জামালপুরের ব্যাপক জনপ্রিয় পত্রিকা সাপ্তাহিক ঝিনাই এর নির্বাহী সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।

এছাড়াও ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর বেসরকারি টিভি বৈশাখী টেলিভিশনে জামালপুর প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে তার কাজ শুরু হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে কাজ করেন দেশ টিভিতে এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৮ মে থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে।

তার লেখনী, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে মন কেড়েছেন লাখো জামালপুরবাসীর।

শুধু সাংবাদিকতায় নয়, সাংবাদিক নেতা হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন গুণী এই সাংবাদিক। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে সর্বদা সোচ্চার ও কঠোর ছিলেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন।

তিনি ১৯৯১ সালে জামালপুর প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন সময় জামালপুর প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এরপর ২০০২ সালে সর্বপ্রথম জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। এরপর জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

এরপর ২০১৮ সালে আবারও জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সাংবাদিক দুলাল হোসাইন বাবা, স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই ছেলেসহ আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৭ বছর।

দীর্ঘ দশমাস মরণব্যাধী ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান সাংবাদিক দুলাল হোসাইন।