শেরপুর প্রেসক্লাবের সম্পাদকের বিরুদ্ধে এক ডজন মিথ্যা মামলার অভিযোগ

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর :

শেরপুর সদর উপজেলার চাঞ্চল্যকর শ্রীমত হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে নিতে এবং হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে হত্যা মামলার আসামি ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা মামলার বাদী পক্ষের বিরুদ্ধে একেরপর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মামলার বাদী উকিল মিয়া ৮ জুলাই দুপুরে অভিযোগ করে বলেন, আমাকেসহ হত্যা মামলার স্বাক্ষী শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, সাংবাদিক শাহরিয়ার শাকির ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের আসামি করে বিবাদী পক্ষ এ পর্যন্ত ১২টি হয়রানীমূলক ও ভিত্তিহীন মামলা আদালতে দায়ের করেছে।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউপির হেরুয়া বালুরঘাটে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল একাডেমি নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় বালুরঘাট মডেল স্কুলের পরিচালক রেজাউল করিম সাদাসহ তার অনুসারীরা। এক পর্যায়ে তারা একাধিক বৈঠক করে মেরাজ উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। চলতি বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি বিকেলে আতিউর রহমান মডেল একাডেমির সংস্কার কাজ দেখে বালুরঘাট গ্রামের বাড়িতে গেলে রেজাউল করিম সাদা, আক্রাম হোসেন আঙ্গুর তার ভাই কাশেম ও জামান মেম্বারের নেতৃত্বে শতাধিক লোক চারদিক থেকে হামলা চালিয়ে মেরাজ ও তার আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং লুটপাট করে। এ সময় সদর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। হামলার ঘটনায় এদিন অন্তত ১২ জন আহত হন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান সাংবাদিক মেরাজ।

ওই দিন সাংবাদিক মেরাজের চাচা শ্রীমত আলী (৫৫) আহত হয়ে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকেই পৌনে দুই মাস ওই গ্রামে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকে।

পরবর্তীতে সদর থানার পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে রেজাউল করিম সাদা, আক্রাম হোসেন আঙ্গুর, কাশেম ও জামান মেম্বারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

শ্রীমত হত্যা মামলার বাদী বলেন, আসামি পক্ষ এ হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বাঁচতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আসামিদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা আমাদের বিরুদ্ধে একেরপর এক মিথ্যা অভিযোগ আদালতে দাখিল করেই চলেছে। এ পর্যন্ত ১২টি হয়রানিমূলক ও মিথ্যা এজাহার তারা দাখিল করেছে।

অপরদিকে গত ১ মার্চ ৮০ বছরের বৃদ্ধ সাজ উদ্দিন মামুন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দুই মেয়ে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ মার্চ রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনাকে পুঁজি করে স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যাকাÐ বলে চালানোর চেষ্টা করে আসামি পক্ষ। পরে এ বিষয়ে থানা পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করে মৃত মামুনের লাশ ময়না তদন্ত করে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে তার শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি মর্মে প্রতিবেদন দেন তিন সদস্যের চিকিৎসক দল।

বর্তমানে শ্রীমত হত্যা মামলার আসামিরা আদালত থেকে জামিনে এসে মামলা তুলে নিতে আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে থানায় একাধিক জিডি করা হয়েছে।

এছাড়া শ্রীমত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ফারুক মিয়া আদালতে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন, তার ছেলে সাংবাদিক শাহরিয়ার শাকিরসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি সদর থানা পুলিশ তদন্ত করছে। এসব মামলার মধ্যে ৩টি সিআইডিতে, ৪টি পিবিআইয়ে ও ৪টি সদর থানায় তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে।

প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর থেকে আমি এবং আমার ছেলে শাহরিয়ার শাকির একদিনও গ্রামের বাড়িতে যায়নি। অথচ আমাকে এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও চিকিৎসক খায়রুল কবির সুমন বলেন, আমরা একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করে সাজ উদ্দিনের ময়না তদন্ত করেছি। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বা আঘাত জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়নি।

পুলিশের পক্ষ থেকে ন্যায় ও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী।