মাদারগঞ্জে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার অভিযোগে ঘাতক স্বামী ও প্রেমিকা আটক

স্বামীর হাতে নিহত স্ত্রী মুসলিমা আক্তার শিখা ও তার শিশুসন্তান তাওহিদ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও মাদারগঞ্জ প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

পরকীয়া প্রেমে পারিবারিক কলহের জের ধরে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ব্যবসায়ী হারুন অর রশীদ পলাশ তার স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলে সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘাতক স্বামী হারুন ও তার কথিত প্রেমিকা নূরহাজানকে আটক করেছে পুলিশ। ২৬ আগস্ট ভোররাতে উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের চর গোপালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ মুসলিমা আক্তার শিখা (৩৫) মাদারগঞ্জ পৌরসভার ঘোনাপাড়া গ্রামের মৃত মোকছেদ শেখের মেয়ে। মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুনারিতলা ইউনিয়নের চরগোপালপুর গ্রামের বিএডিসির সাবেক মেকানিক্স মো. ফজলুল হকের ছেলে হারুন অর রশিদ পলাশ বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন। বিদেশ থেকে ফিরে এসে মাদারগঞ্জ পৌরসভার বালিজুড়ি বাজারের থানা মোড়ে স-মিল স্থাপন করে কাঠের ব্যবসা শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি স-মিলের ব্যবসা বাদ দিয়ে বাড়িতে মুরগির খামার দিয়েছেন। তিনি বিবাহিত। এক মেয়ে ও দুই ছেলের বাবা তিনি। ওই স-মিলের ব্যবসা করার সময়ই হারুন স-মিলের কাছেই নূর হাজান নামের এক নারীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।

এনিয়ে স্ত্রী মুসলিমার সাথে তার পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। সেই কলহের জের ধরে ২৬ আগস্ট ভোররাত চারটার দিকে হারুন তার স্ত্রী মুসলিমা ও তিন বছরের ছেলে তাওহিদকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। প্রতিবেশীরা রাতেই এ ঘটনা আঁচ করতে পেরে মাদারগঞ্জ থানায় খবর দেয়। মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ ২৬ আগস্ট সকালে ওই বাড়ি থেকে ঘাতক স্বামী হারুনকে আটক এবং নিহত মা-ছেলের মরদেহ উদ্ধার করেছে।

খবর পেয়ে ২৬ আগস্ট সকালে পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার, মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ছামিউল আলম, মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল চর গোপালপুর গ্রামে হারুনের বাড়িতে যান। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে হারুনের পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি জানার পর আটক হারুনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নূর জাহান নামের এক নারীর সাথে তার পরকীয়ার বিষয়টির প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন পুলিশ সুপার । পরে ওই নারীকেও পুলিশ আটক করেছে।

এ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, নিহত গৃহবধূ মুসলিমা ও তার ছেলে তাওহিদের গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। নিহত মা ও ছেলের শরীরের দুটি স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের রক্তাক্ত ক্ষত পাওয়া গেছে। হারুন তার স্ত্রী ও ছেলেকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরকীয়ার জেরে স্ত্রীর সাথে কলহের জের ধরেই হারুন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হারুন ও তার কথিত প্রেমিকা নূরজাহান উভয়েই তাদের মধ্যে পরকীয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আটক দু’জনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, নিহত মা ও ছেলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো বটিদা, রক্তমাখা একটি লুঙ্গি, বিছানার চাদর ও মাছ ধরার জাল আলামত হিসেবে জব্ধ করা হয়েছে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মুসলিমার ভাই শ্যামল পারভেজ থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে দ্রুত তা মামলা হিসেবে রুজু করে আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।