বকশীগঞ্জে কৃষি ব্যাংকে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের ঋণ বিতরণে অনিয়ম

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বাট্টাজোড় নতুন বাজার শাখায় মুজিব বর্ষ উপলক্ষে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের ঋণ বিতরণে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী এক ঋণ গ্রহিতা।

লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একশতম জন্মবার্ষিকী (মুজিব বর্ষ) উপলক্ষে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের মাধ্যমে ৭% সুদে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম হাতে নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বাট্টাজোড় নতুন বাজার শাখায় ওই প্রকল্পের আওতায় ২২০ জন ঋণ গ্রহিতাকে ৪৬ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। গত ১৮ মার্চ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত এ ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

কিন্তু বেশিরভাগ ঋণ বিতরণে ঋণ গ্রহিতাদের কাছ থেকে ব্যাপক হারে উৎকোচ আদায় ও বকশিশ নেওয়া হয়। প্রতিটি ঋণ গ্রহিতা ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করার কথা বলা আছে। কোন কোন গ্রহিতাকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়। অতিদরিদ্র, প্রান্তিক চাষী, যাদের জমি শূন্য থেকে দেড় একর পর্যন্ত ও যাদের বার্ষিক আয় এক লাখ টাকা পর্যন্ত শুধুমাত্র তারাই এ ঋণের সুবিধা পাবেন। কিন্তু কৃষক নন বরং জমির পরিমাণও বেশি এমন ব্যক্তিকেও ঋণের আওতায় আনা হয়েছে।

বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোড়, ধানুয়া কামালপুর ও বগারচর ইউনিয়নের ২২০ জন গ্রাহককে এই ঋণ বিতরণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে ২০ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করার সময় বাট্টাজোড় নতুন বাজার শাখার দ্বিতীয় ব্যবস্থাপক রফিকুজ্জামান ও ক্যাশিয়ার আল আমিন হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ১০ হাজার করে কেটে নিয়েছেন।

ওই শাখা থেকে ঋণ নেওয়া স্থানীয় দত্তেরচর গ্রামের সেলিম মিয়া জানান, ওই শাখা থেকে ২০ হাজার টাকার ঋণ পেতে আমাকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এরকম আরও অনেকে ঘুষ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

যাদের কাছ থেকে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের দ্বিতীয় কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান ও ক্যাশিয়ার আল আমিন হককে ঘুষ দিতে পা পারায় অনেকে ঋণ পর্যন্ত পান নি।

এছাড়াও ব্যাংকের ভেতরে স্থানীয় কিছু দালাল চক্র কাজ করায় ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

সরেজমিনে বাট্টাজোড় নতুন বাজার শাখায় ব্যাংকের দ্বিতীয় কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান ও ক্যাশিয়ার আল আমিন হকের সাথে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে কথা হলে তারা তা অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমার অগোচরে কোথাও অনিয়ম হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। কেউ আমার কাছে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে কোন অভিযোগ দেন নি।

স্থানীয় ঋণ গ্রহিতারা জানান, মুজিব বর্ষকে কলঙ্কিত করতে যারা ঘুষের বিনিময়ে ঋণ বিতরণ করেছেন এবং গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করেছেন সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক তারা সেই সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

বকশীগঞ্জ উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ. স. ম. জামশেদ খোন্দকার জানান, ব্যাংকের অনিয়মের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, আগামী ৫ জুলাই উপজেলা কৃষি ঋণ কমিটির সভায় তা আলোচনা করা হবে।