জামালপুর সদর হাসপাতালের দুই ওয়ার্ডবয় করোনা আক্রান্ত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

২৫০ শয্যার জামালপুর সদর হাসপাতালের দুই ওয়ার্ডবয়সহ জেলায় নতুন করে আরো পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে আগে আক্রান্ত হওয়া মাদারগঞ্জ হাসপাতালের আয়ার স্বামী ও শাশুড়ি এবং নারায়ণগঞ্জফেরত একজন গার্মেন্টসকর্মী রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মৃত দুই নারীর দেহে করোনা শনাক্ত হওয়াসহ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২১ জনে। ১৭ এপ্রিল জেলার সিভিল সার্জন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, ১৭ এপ্রিল রাতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনার পিসিআর ল্যাব থেকে পাওয়া ৪৫ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে পাঁচজনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন। নতুন এই পাঁচজনের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে জামালপুর সদর হাসপাতালের দু’জন ওয়ার্ডবয়, মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে নারায়ণগঞ্জফেরত একজন পুরুষ গার্মেন্টসকর্মী (২৫) এবং মাদারগঞ্জ হাসপাতালে আগে আক্রান্ত একজন আয়ার স্বামী (৩৫) ও শাশুড়ি (৫৫)।

১৪ এপ্রিল ওই আয়ার করোনা শনাক্ত হলে তাকে জামালপুর সদরে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে স্থানান্তর না করে মাদারগঞ্জের চরপাকেরদহ ইউনিয়নের তেঘরিয়ায় স্বামীর বাড়িতেই তাকে আইসোলেশনে রাখে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। পরে তার শাশুড়ি ও স্বামীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৭ এপ্রিল পরীক্ষার প্রতিবেদনে তাদের করোনা পজিটিভ আসে।

এদিকে জামালপুর সদর হাসপাতালের দুই ওয়ার্ডবয়ের মধ্যে একজনের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার নরুন্দি ইউনিয়নে এবং অন্যজনের বাড়ি সদরের শরিফপুর ইউনিয়নের গোদাশিমলা গ্রামে। তারা দু’জনই বিবাহিত এবং জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। এই হাসপাতালে তারা দুজনই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হলেন। ফলে এ নিয়ে গোটা হাসপাতালজুড়ে করোনাভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, নমুনা সংগ্রহের আগে এবং পরে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই দু’জন ওয়ার্ডবয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কক্ষে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হাসপাতাল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে করোনা আইসোলেশন সেন্টারেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে ইতিমধ্যে হাসপাতালের স্টাফসহ বহু মানুষের সংস্পর্শে গেছেন এই দুই ওয়ার্ডবয়। এ নিয়ে পরবর্তী করণীয় কি হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জেলা প্রশাসক, জেলার সিভিল সার্জন, সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই আলোচনা করছিলেন।

জামালপুরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক আবু সাঈদ মো. মাহবুবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আজকে যে পাঁচজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে তাদের প্রত্যেককে জামালপুরের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আনা, তাদের বাড়ি ও কর্মস্থলসহ আশপাশের এলাকা লকডাউন করা, তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

জামালপুর সদর হাসপাতাল লকডাউন করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, করোনা আক্রান্ত ওই দুই ওয়ার্ডবয়ের সংস্পর্শে আসা হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্টাফ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এবং পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতো বড় হাসপাতাল তো আর এখনই লকডাউন করা ঠিক হবে না। তবে হাসপাতালের কার্যক্রম কিছুটা সীমিত আকারে চালানো হবে।