সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম
জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌর এলাকার আলহাজ জুট মিল চালু ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে চারঘণ্টাব্যাপী সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি করেছে শ্রমিকরা। ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুই সহস্রাধিক শ্রমিক জামালপুর-সরিষাবাড়ী-ভুয়াপুর সড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সরিষাবাড়ী রেল স্টেশন এলাকায় রেলপথে অবস্থান নিলে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী একটি লোকাল ট্রেন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এদিকে বিক্ষোভে পৌরসভার প্রধান সড়ক বন্ধ হয়ে পড়ায় উপজেলার স্বাভাবিক যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। দেশের বৃহৎ যমুনা সার কারখানার সার পরিবহণও পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এ সময় বিপুল পরিমাণ থানা ও জিআরপি পুলিশ মোতায়েন ছিলো। জেলা প্রশাসক এনামুল হক মিল চালু করতে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
শ্রমিক-কর্মচারী সূত্র জানায়, আলহাজ জুট মিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে গত বছরের ২১ জুলাই মধ্যরাতে পূর্বঘোষণা ছাড়াই কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৭ সালে স্থাপিত এ মিলে দৈনিক প্রায় ১৫ মেট্রিক টন পাটের বস্তা, ব্যাগ ও কার্পেটের সুতা প্রস্তুত হতো। মিলটি হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় কর্মরত প্রায় চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন, সিবিএ ও জনপ্রতিনিধিরা বারবার যোগাযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। শ্রমিক-কর্মচারীরা মিল চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ ১৮ সেপ্টেম্বর আলহাজ জুট মিল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন (সিবিএ) সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়। এ সময় শ্রমিকরা খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিলসহ প্রধান সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার অন্তত ২০টি স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রেলক্রসিংয়ে শ্রমিকরা অবস্থান করলে ২৫৪ নম্বর লোকাল ট্রেন প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আটকা থাকে। কর্মসূচিতে যমুনা সার কারখানা, পপুলার, এআরএ জুট মিল সিবিএ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সরিষাবাড়ী অনার্স কলেজ ছাত্রসংসদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করে।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে আলহাজ জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন আলহাজ জুট মিল সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক আব্দুল মান্নান, শ্রমিকলীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, টাউন বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জিন্নাহ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমাণ্ডের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বিদ্যুৎ, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান দুখু, পপুলার জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি আলফাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, অনার্স কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি নাজমুল হুদা বজলু প্রমুখ।
মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মিলটি বন্ধ করেছে। মালিকের কাছে শ্রমিকদের বকেয়া পড়ে আছে দুই কোটি টাকা বকেয়া। নতুন কর্মসংস্থান ও বকেয়া না দেওয়ায় একমাত্র মিলের ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক-কর্মচারীরা বর্তমানে বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।’ শ্রমিকরা দ্রুত বকেয়া পরিশোধ ও মিল চালু না হলে আরো বড় কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের দাবি পূরণ করতে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলে মুঠোফোনে শ্রমিক নেতাদের আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে।
সিবিএ’র সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকদের দাবি নিয়ে মালিকের সাথে কথা বলতে জেলা প্রশাসক ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। তাই আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। সমাধান না হলে পুনরায় কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক মুঠোফোনে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে তাদের দাবি পূরণে মালিকপক্ষকে একটি বৈঠকে ডাকবো। মিলটি চালু করা সম্ভব না হলেও যেন অন্তত তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয় সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলা হবে।’