কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা, পরিষদ অচল

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য ওবায়দুল হক বাবু। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুরের ইসলামপুরের কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপিনেতা জিয়াউর রহমান সনেটের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগসহ ইউএনও’র কাছে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ইউপি সদস্যরা। এতে পরিষদের কার্যক্রম একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ইসলামপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্যরা বেশকিছু অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে কুলকান্দি ইউপি সদস্য মো. ওবায়দুল হক বাবু সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সনেট সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ ১১ জন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে যমুনার দুর্গম চর জিগাতলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের মাটিকাটা কাজের প্রকল্প কমিটি করে তার আস্থাভাজন ইউপি সদস্য রজব আলীকে দিয়ে মনগড়াভাবে প্রকল্পের কাজ করছেন। ইতিমধ্যে ওই প্রকল্পের বরাদ্দের ৪৩৮ মেট্রিক টনের মধ্যে ২২০ মেট্রিক টন গম উত্তোলন করেছেন। এ ছাড়াও চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর জ্বাল করে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে চলতি অর্থ বছরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প দাখিল করেছেন। গত বছর একটি এনজিওর মাধ্যমে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছ থেকে চাপ প্রয়োগ করে বিগত পাঁচ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করেন ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৮৯ হাজার ৪০০ টাকা ওই এনজিওটিকে কমিশন দেন। বাকি ২ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা আজও পরিষদের ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি ইউপি চেয়ারম্যান।

ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, গত বছর ভিজিডির বরাদ্দের চাল বিতরণে ওজনে কম দেওয়া এবং ভিজিডি কার্ডধারী গরিব মানুষদের কাছ থেকে পরিবহন খরচ ও ছালার বস্তার দামের কথা বলে জনপ্রতি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেন ইউপি চেয়ারম্যান। ইউপি চেয়ারম্যান সপ্তাহের অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। এলাকায় এলেও দিনের বেলা পরিষদে বসেন না। পরিষদের কার্যক্রম শুরু করেন বিকেলে বা সন্ধ্যার পর থেকে। গভীর রাত পর্যন্ত ইউপি সদস্য ও মহিলা সদস্যদের থাকতে বলেন। না থাকতে চাইলে হুমকি দেন। মহিলা সদস্যদের পরিষদের বাথরুম ব্যবহার করতে না দেওয়াসহ তাদের সাথে অসদাচরণ করেন। ২০১৭ সালের জুনে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই চেয়ারম্যানের একক আধিপত্য ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইউনিয়নবাসী পরিষদের সরকারি নানা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ প্রায় চারমাস ধরে পরিষদের সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়েছে।

এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ১১ জন ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরে দুদকে অভিযোগ করেছেন। তারা গত ৬ জানুয়ারি ইসলামপুরের ইউএনও’র কাছে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। ইউএনও স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এসব অভিযোগের জবাব চাইলে চেয়ারম্যান কোনো জবাব দাখিল করেননি বলে ইউএনও স্বীকার করেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যানের অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ নানা অনৈতিক কাজে সাড়া না দেওয়ায় উল্টো ইউপি সচিব মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র গায়েব করার বানোয়াট অভিযোগ এনে ইসলামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের হুমকির মুখে ওই ইউপি সচিব প্রায় চার মাস ধরে পরিষদে কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এ ব্যাপারে ইউপি সচিব মিজানুর রহমান ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নথি ও কাগজপত্র গোপন করে তাকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছেন বলে ইউএনও’র কাছে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন।

কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সনেট অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘ইউপি সদস্যরা পরিষদ পরিচালনায় আমাকে বিভিন্ন অবৈধ চাপ প্রয়োগ করে। তাদের অবৈধ আবদারে সাড়া দেইনি। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছে।’ সচিবের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সচিব মিজানুর রহমান ইউপি সদস্যদের সাথে যোগসাজস করে পরিষদের মূল্যবান নথিপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ইসলামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।’ অনাস্থা প্রস্তাবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও’র পত্রের জবাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউএনও ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়ে বসবে বসবে বলে কালক্ষেপণ করায় ইউএনও’র পত্রের জবাব দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কুলকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমের অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সনেটের কাছে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব চেয়ে পত্র দিয়েছি। কিন্তু তিনি ওই পত্রের জবাব দেননি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে তদন্তের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকায় স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হবে।’