ভোটের দিন সরে দাঁড়ালেন জামালপুরের তিনটি আসনের বিএনপির প্রার্থী

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন ৩০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দায় বসে প্রতিবাদ জানান। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে জামালপুর-১ ও জামালপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থীশূন্য থাকলেও বাকি তিনটি আসনের বিএনপির প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নিলেও ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন বেলা ১১টার মধ্যে তারাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে এটাকে প্রহসনের ভোট বলে দাবি করেছেন।

জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের বিএনপির প্রার্থী সুলতান মাহমুদ বাবু নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এটাকে প্রহসনের নির্বাচন বলে দাবি করেছেন। তিনি বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘প্রশাসনের সহায়তায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ২৯ ডিসেম্বর রাতেই এ আসনের ৮৮টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৪০টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। বাকি কেন্দ্রগুলোতে ৩০ ডিসেম্বর সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই বেলা ১১টার মধ্যেই নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ভোট নেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধানের শীষের এজেন্টদের তাড়িয়ে দেয়। তাদের দাপটে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্র থেকে সরে যায়। এটা ভোটের কোনো সিস্টেম হতে পারে না। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি সহিংসতা এড়াতে নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১২টার দিকে মেলান্দহে তার বাড়িতে অভিযোগ করে বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘এ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সমর্থকরা ২৯ ডিসেম্বর রাতে দুই উপজেলার অন্তত ৫০টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সিল মেরে রাখে। ৩০ ডিসেম্বর সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ধানের শীষ প্রতীকের পুলিং এজেন্টদের বের করে কেন্দ্র দখল করে নিয়ে ব্যালট পেপারের নৌকা প্রতীকে একচেটিয়া সিল মেরে সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। এখানে ভোটের ন্যূনতম পরিবেশ নেই। ভোটের নামে এ আসনে তামাশা করেছে প্রশাসন। এই ধরনের সম্পূর্ণ প্রহসনের নির্বাচন থেকে আমি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’

এদিকে গণহারে ভোট কারচুপির অভিযোগে জামালপুর-৫ (সদর) আসনের বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন ৩০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় একাই জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দায় বসে নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে বেলা দেড়টার দিকে তিনি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

লিখিত অভিযোগে শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেছেন, ‘প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভোটের আগের রাতেই জামালপুর সদর আসনের ৩০/৩৫টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোট নিয়ে নেয়। তারা ৩০ ডিসেম্বর সকাল আটটায় ভোট শুরু হওয়ার পরপরই সদরের ১৫০টি কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকের ভোট নিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলে তারা নিরুত্তর থাকেন।’ তিনি নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে এ আসনের অন্তত ৮০টি কেন্দ্র বাতিলসহ এ আসনের নির্বাচন বাতিল করে পুননির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর ৩০ ডিসেম্বর বিকেল চারটায় তার সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তিনজন প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তারা কেন যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা তাদের ব্যাপার।’

তিনি আরো বলেন, ‘জেলার পাঁচটি আসনের ৫৮১টি কেন্দ্রের মধ্যে দুয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনীসহ সর্বস্তরের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সকল কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলেই হয়তো আমরা একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারলাম। এভাবে নির্বাচন হওয়ায় আমি সন্তুষ্ট।’