‘আমরা সাহায্য চাইনা, যাতায়াতের রাস্তা চাই’

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: ‘আমরা সাহায্য চাইনা, যাতায়াতের রাস্তা চাই’ এমন আর্তি শেরপুরের ঝিনাইগাতীর ডেফলাই বেদেপল্লীর বাসিন্দাদের। বেদেপল্লীর বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনমান উন্নয়ন বিষয়ক এক সচেতনতামূলক সভায় এমন আর্তি জানান, বেদেপল্লীর সর্দারনী সুচরিতা বেগম, সর্দার সাইফুল ইসলাম বাঘাসহ বেদে পল্লীর অধিবাসীরা। নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি, নারী রক্তদান সংস্থা, প্রিপ ও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্টের (আইইডি) যৌথ আয়োজনে ১৫ জুলাই বিকেলে ডেফলাই বেদেপল্লীতে ওই সচেতনতামুলক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

বেদে পল্লীতে বসবাসকারীরা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় এক যুগ আগে ঝিনাইগাতীর ডেফলাই গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেছেন একসময়ের যাযাবর জীবনযাপনকারী বেদেরা। এই বেদেপল্লীতে এখন ২৬৫টি পরিবারের নারী-শিশুসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। নারীরা গ্রাম ও শহর ঘুরে ঘুরে তাবিজ, কবজ, ঝাড়ফুক আর সিংগা লাগিয়ে ও পুরুষরা সাপ ধরা, বিন বাজিয়ে সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কেউ কেউ এখন দোকানপাট, ইজিবাইক চালনা ও কৃষি শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন।

দীর্ঘদিন ধরে তারা এখানে বসবাস করলেও এ বেদেপল্লী থেকে প্রধান সড়কে যাতায়াতের জন্য কোন রাস্তা না থাকায় তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এজন্য তারা সাহায্য নয়, চলাচলের জন্য প্রায় ২০০ মিটারের ওই রাস্তাটি নির্মাণের দা্বি জানান। তাছাড়া কাছাকাছি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিশুদের পড়ালেখার জন্য তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণেরও দাবি তুলে ধরেন।

বেদে মানিক, মইনুল হক মোল্লা ও শহীদুল ইসলাম বলেন, এই বেদে পল্লীর আজো আমাদের যাতায়াতের কোনো রাস্তা নির্মাণ হয়নি। বেদে পল্লী থেকে বাইরে বেরুতে হলে অন্যের ফসলি জমি দিয়ে চলাচল করতে হয়। নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেউ অসুস্থ হলে বা সন্তান প্রসবের সময়ও কোনো যানবাহন নেয়ার মতো সুযোগ নেই। কেউ মারা গেলে লাশ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। আমরা অনেকটাই নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছি। ক্রমেই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মূলস্রোত থেকে পিছিয়ে পড়ছি। তাই আমরা চাই সরকার যেন দ্রুত আমাদের যাতায়াতের জন্য রাস্তা করে দেয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা পরামর্শ প্রদান করেন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আরনিকা আফরিন প্রমা। জনউদ্যোগ আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন নলকুড়া ইউনিয়নের স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার রশিদুর রহমান খান এমদাদুল, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, প্রকৃতিপ্রেমী আব্দুল কাদের, কবি ও লেখক জ্যোতি পোদ্দার, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক শওকত হোসেন, নারী রক্তদান সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পঞ্চমী দেব রুমা, সিপিবি নেতা সোলায়মান আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক সুশীল মালাকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা সকলেই দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বেদে পল্লীর উন্নয়নে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তারা এই বেদে পল্লীর নাগরিক সমস্যা সমাধানকল্পে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে শিক্ষক-সাংবাদিক, শিল্পী, নারী অধিকার সংগঠক, সাংবাদিক, আইনজীবী সমন্বয়ে গঠিত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বেদে পল্লী ঘুরে দেখেন এবং অধিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যাদি সম্পর্কে অবহিত হন।

সভায় স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার রশিদুর রহমান খান এমদাদুল প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, আমার চলতি মেয়াদকালের মধ্যেই বেদেপল্লীর বাসিন্দাদের যাতায়াতের রাস্তাটি নির্মাণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। তাছাড়া তাদের জীবনমান উন্নয়নেও সচেষ্ট থাকবো।