ইউটিউব দেখে শেরপুরের পাহাড়ে মরুভূমির সাম্মাম চাষ, মিলেছে সফলতা

শেরপুরে মরুভূমির সাম্মাম চাষে সফল হয়েছেন উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: মরুভূমির ফল সাম্মাম বা রক মেলন এবার শেরপুুরের গারো পাহাড়ে চাষ হচ্ছে। জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুঁড়া ইউপির সীমান্তঘেঁষা গ্রাম গোমরায় এক তরুণ উদ্যোক্তা পরীক্ষামূলকভাবে এ ফল চাষে সফল হয়েছেন। এবার তিনি বাণিজ্যিকভাবে সাম্মাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

এরমধ্যে এ ফল চাষের খবর পেয়ে তা দেখার জন্য আশপাশের গ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের মানুষ ওই ফল বাগানে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় করছে। কৃষি বিভাগ বলছে, মরুভূমির এ ফল চাষ সম্প্রতি দেশে শুরু হলেও শেরপুরে এটি প্রথম। গারো পাহাড়ের পতিত জমিতে সাম্মাম চাষ স্থানীয় কৃষকদের আকৃষ্ট করেছে।

বাগান পরিদর্শনকারী শ্রীবরদী উপজেলার তাঁতিহাটি গ্রামের কৃষক আমের আলী বলেন, সাম্মাম কুমড়া গাছের মতো লতানো গাছ। বর্তমানে এই বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে গোল গোল ফল। প্রায় প্রতিটি গাছেই ভরপুর ফল ও ফুল। বাঁশের বাতা আর নেট ব্যাগ বা জালের ফাঁকে ফাঁকে পুরো ক্ষেত ফলে ভরে রয়েছে।

কৃষক আমের আলী আরও বলেন, জানতে পেরেছি এই ফল খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ। বর্হিবিশ্বে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশে এটির প্রচলন এখনো কম। এ ফলকে সৌদিতে সাম্মাম বলে তবে বিভিন্ন দেশে এটি রক মেলন, সুইট মেলন, মাস্ক মেলন, হানি ডিউ নামেও পরিচিত। সাম্মামের দুটি জাত রয়েছে। একটি জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ লাল, আরেকটি জাতের বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ লাল। তবে খেতে দুই ধরনের ফলই খুব মিষ্টি ও রসালো।

উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন জানান, প্রথমে ইউটিউবে দেখেন সাম্মাম খুবই উচ্চমূল্যের একটি ফল। তাই তিনি এ ফল চাষ করতে স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করে চলতি মাসের ফেব্রুয়ারি মাসে তার পৈত্রিক ১০ শতক জমিতে ওই বীজ পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করেন। মাত্র ৩০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসতে শুরু করে। পরাগায়নের পর ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে ফল এবং সবশেষ এপ্রিল মাসের শেষ দিকে সেই ফল পাঁকতে শুরু করে।

উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন আরও জানান, মাত্র তিনমাসের মধ্যে এ ফল খাওয়া ও বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ। এ ফল চাষে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ফল বিক্রি করার টার্গেট রয়েছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। প্রতিটি ফল প্রায় দুই কেজি ওজনের হয়েছে। এর পাইকারি বাজার মূল্য ২০০ টাকা কেজি হিসেবে প্রতিটা ফল প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি করা যাবে।

এদিকে প্রত্যন্ত এ গারো পাহাড়ে আনোয়ারের সাম্মাম চাষে গ্রামের অনেকেই প্রথমে সন্দিহান থাকলেও কিছুদিনের মধ্যে ওই গাছে প্রচুর ফুল ও ফল দেখে আশ্চর্য হয়েছে গ্রামবাসী। সেইসাথে তার এ ফল চাষে সফলতা দেখে গ্রামের অনেকেই তার বাগান দেখতে এবং এ ফল চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

স্থানীয় আব্দুল কাদের বলেন, মরুভূমির ফসল সাম্মাম ফল চাষের খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের মানুষ এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসছে আনোয়ারের বাগানের ফল দেখতে। কেউ তা পরখ করতে খেয়ে এর স্বাদ উপভোগ করছে। আবার কেউ ফল এবং ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

স্থানীয় কৃষিবিদ বজলুল হুদা জানান, সাম্মাম ফল চাষে খুব বেশি পানির প্রয়োজন হয়না। তবে জমে থাকা পানি এ চাষে ঝুঁকি রয়েছে। গারো পাহাড়ে পানি জমে থাকার কোন সুযোগ নেই বলে এ ফল চাষ বেশ উপযোগী।

শেরপুর শহর থেকে আনোয়ারের সাম্মাম বাগান দেখতে আসা কাজী মাসুম বলেন, সৌদি আরবের ফল সাম্মাম গারো পাহাড়ে চাষ হয়েছে বলে দেখতে এসেছি। দেখে খুবই ভালো লেগেছে। নতুন এ ফল দেখে মন ভরে গেছে।

তিনি জানান, পোঁকার আক্রমণ থেকে এই ফসল রক্ষার জন্য বাগান মালিক রাসায়নিক কীটনাশকের বদলে পরিবেশবান্ধব সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, বর্তমানে পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং আধুনিক চাষাবাদে তরুণরা এগিয়ে আসছে। মরুভূমির এ ফল চাষ সম্প্রতি দেশে শুরু হলেও শেরপুরে এটি প্রথম। গারো পাহাড়ের পতিত জমিতে সাম্মাম চাষ স্থানীয় কৃষকদের আকৃষ্ট করেছে বলে তিনি মনে করেন।