হিজড়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জামালপুরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে মতবিনিময়

সভায় বক্তব্য রাখেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ফকির সাইফ উদ্দিন।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: বিএসআরএম এর আর্থিক সহায়তায় উন্নয়ন সংঘের বাস্তবায়নাধীন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিজড়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জামালপুর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ২২ মার্চ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন সংঘের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলম মোল্লা।

জামালপুর ১ নং পুলিশ ফাঁড়িতে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ, পুলিশ পরিদর্শক (ট্রাফিক) ফকির সাইফ উদ্দিন, পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, সহকারী পরিচালক কর্মসূচি মুর্শেদ ইকবাল, হিজড়া জনগোষ্ঠীর নেত্রী দেলোয়ারা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র সরকার। সার্বিক সহায়তায় ছিলেন প্রকল্প কর্মকর্তা আরজু মিয়া, পিআর ইডুকেটর রবিন ও অন্তর।

সভায় জামালপুর ১ নং ফাঁড়ি ও ট্রাফিক অফিসের পুলিশ সদস্যবৃন্দ, হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, উন্নয়ন সংঘের প্রতিনিধিসহ ৩৫ জন অংশ নেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রকল্পের ধারণা পত্র উপস্থাপন করা হয়।

সভায় বক্তব্য রাখেন জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

টিআই ফকির সাইফউদ্দিন বলেন, সরকারের পাশাপাশি ট্রান্সজেন্ডারদের উন্নয়নে বিএসআরএম ও উন্নয়ন সংঘ কাজ করছে জেনে ভালো লাগছে। তিনি বলেন, আমরা সবাই যদি হিজড়াদের উন্নয়নে এগিয়ে আসি তাহলে তারা আর অমর্যাদাকর পেশায় থাকবে না। তিনি নিজের কৃষি খামারে কমপক্ষে একজন হিজড়াকে কর্মসংস্থান করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, সমাজের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে উন্নয়ন সংঘের কাজে এবং হিজড়াদের উন্নয়নে বিএসআরএম এর মতো শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় আমরা খুশি। তিনি সকলের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের আহ্বান জানান। পাশাপাশি হিজড়াদের আচরণ পরিবর্তনেরও অনুরোধ জানান। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে ট্রান্স জেন্ডারদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

সভা সূত্রে জানা যায়, উন্নয়ন সংঘের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন হিজড়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জামালপুরে প্রাথমিকভাবে ২৫০ জন হিজড়াদের প্রকল্পের উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।

মতবিনিময় সভায়।ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

উল্লেখ, হিজড়াদের চলমান আয়ের উৎস এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিদ্যমান সুযোগগুলো চিহ্নিত করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানান। এ প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে চাহিদা নিরুপণ নিশ্চিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছে। তাদের মাঝে ইতিমধ্যে ট্রেডভিত্তিক ৮৯ জনকে সহজশর্তে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তারা সফলাতার সাথে ব্যবসায়ীক লাভ থেকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের চিন্তা করা হচ্ছে। সরকারি, বেসরকারি ও সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে আবাসন সুবিধা, পরিবারে তাদেরকে সংযুক্তি করা, সরকারি ভাতা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করাসহ উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের সম্মান ও মানবাধিকার সুরক্ষার কাজ চলছে বলে উন্নয়ন সংঘ সূত্র জানায়।