শেরপুরের ইকোপার্ক এখন মাদকসেবী এবং জুয়াড়িদের নিরাপদ কেন্দ্রস্থল

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: এগারো বছর আগে গড়ে উঠা শেরপুরের নকলা উপজেলার উরফা ইউপির ইকোপার্কটি অযত্ন আর অবহেলার কারণে সেটি এখন মাদক এবং জুয়াড়িদের নিরাপদ কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। স্থনীয়রা বলছেন, সরকার ইকোপার্কটি সংস্কার করলে বিনোদন প্রেমিদের পাশাপাশি তারাও নানাভাবে লাভবান হতে পারবেন। অন্যদিকে ইকোপার্কটি পর্যটকদের কাছে চমৎকার একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিলুপ্ত প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, প্রাণী বৈচিত্র সংরক্ষণ, জনসাধারণের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং ইকো-ট্যুরিজম শিল্পের প্রসার এবং শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে কাবিখার বরাদ্দে নকলা উপজেলা শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে উরফা ইউনিয়নের ভোগাই নদীর মোহনায় সরকারি খাস জমিতে ইকোপার্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রায় ৮শ’ শতাংশ জমি জুড়ে ওই পার্ক। পরে সেখানে আম, লিচু, বট, আতা, শরিফা, তালসহ ৬৮ প্রজাতির প্রায় আড়াই হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়। আর এর দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা কৃষি বিভাগ, জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টার এবং ঢাকার খামারবাড়ির মান সম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা।

এর আগে ইকোপার্কটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী থেকে বালু তুলে ওই স্থানটি প্রায় সাত ফুট উচ্চতায় ভরাট করা হয়। এর তত্বাবধানে ছিলেন নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন।

স্থানীয় চাঁন মিয়া বলেন, ইকোপার্কটি এখন সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই প্রকল্পে এখন বিষধর সাপ এবং শিয়ালের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এ কারণে পার্কের পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে রোপণ করা ফসল কৃষকরা আনতে পারেনা। দিনের বেলাও শিয়ালের দল সেখানে দাপিয়ে বেড়ায়।

আকমল মিয়া নামে একজন বলেন, ইকোপার্কটিতে এখন বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মে ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর ওই সময়ে কৃষি বিভাগের রোপণ করা গুটি কয়েক প্রজাতির গাছ থাকলেও অযত্ন আর অবহেলার কারণে প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আলফাজ শেখ বলেন, ওই পার্কটি হওয়ার সময় ভেবেছিলাম আমাদের এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। আমরাও ব্যবসায়ীকভাবে লাভবান হতে পারবো। কিন্তু এখন দেখছি ইকোপার্কটি এখন শুধু জঙ্গল আর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এখন শিয়াল এবং সাপের ভয়ে সেখানে মানুষ যেতেই চায় না।

ওই ব্যবসায়ী পার্কটি উন্নতভাবে তৈরি করে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে চালু করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

সারোয়ার হোসেন নামে একজন বলেন, প্রজেক্ট শুরুর সময় অফিস থেকে কর্মকর্তারা এখানে নিয়মিত আসতেন। কিন্তু এখন আর কেউ আসেনা। তিনি আরো বলেন, সরকার এখানে অনেক টাকা খরচ করে পার্ক করলেও তা জনসাধারণের কোন কাজে আসছেনা।

ইকোপার্কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ফিরোজ মিয়া বলেন, পার্কটিতে আসা-যাওয়া খুব সমস্যা। এখানে ব্রিজ হলে ভালো হতো। তার চেয়েও বেশী জরুরী এর নিরাপত্তার জন্য চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ।

প্রকল্পে মাটি ভরাট কাজে কত টাকা খরচ হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র হাফিজুর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত আগের নথিপত্র না দেখে কিছু বলা যাবেনা বলে তিনি জানান।

জামালপুর হর্টিকালচার বিভাগের উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুকন বলেন, প্রকল্পে বিভিন্ন সোর্স থেকে গাছের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করা হয়েছে। তাই চারা কেনার সম্পূর্ণ হিসাব তার কাছে নাই।

উরফা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরে আলম তালুকদার বলেন, পার্কটি দেখভালের অভাবে সেখানে শেয়াল, সাপ ও বিচ্ছুর উপদ্রোপ বেড়েছে। পাশাপাশি ওই স্থানটি জুয়া এবং মাদকসেবীদের কাছে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অন্যদিকে ইকোপার্কটি পর্যটকদের কাছে চমৎকার একটি বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক হুমায়ুন কবির।