জোড়া খুন : মেয়ের পর মায়েরও লাশ উদ্ধার, আটক ৩

জামালপুর সদর থানায় স্ত্রীর লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন শোকার্ত স্বামী মোস্তফা কামাল। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: ৪ সেপ্টেম্বর সকালে মেয়ে কাজলী আক্তারের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের একদিন পর ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে জামালপুর সদরের বাঁশচড়া ইউনিয়নের বড়ইতাইর খালে তার মা জোসনা বেগমেরও লাশের সন্ধান মিলেছে। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। ৪ সেপ্টেম্বর সকালে কাজলীর লাশ পাওয়া যায় সদরের রানাগাছা ইউনিয়নের মোনাকুর্শা গ্রামে নির্জন বাঁশঝাড়ে। ৫ সেপ্টেম্বর রাতে জোসনা বেগমের লাশ উদ্ধার করে জামালপুর মর্গে পাঠিয়েছে সদর থানা পুলিশ।

জানা গেছে, নিহত কাজলী জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের নান্দিনা নয়াপাড়া এলাকার বাদাম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের মেয়ে। দুর্বৃত্তরা ৩ সেপ্টেম্বর রাতেই কাজলী ও তার মাকে হত্যা করে পৃথক স্থানে লাশ ফেলে রাখে বলে পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা ধারণা করছেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে সদরের বাঁশচড়া ইউনিয়নের জামিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য সাজ মাহমুদ সরকার লালু, জামিরা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে মামুন মিয়া এবং মধুপুরের শোলাকুড়ি গ্রামের আব্দুস সোবাহানের ছেলে শামীম হাসানকে আটক করেছে পুলিশ। সাজ মাহমুদ সরকার লালুর ভাতিজা নিপুন ৩ সেপ্টেম্বর রাত থেকে পলাতক রয়েছেন। নিপুন কাজলী আক্তারকে জামিরা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চাকরির বিষয়েই কথা বলার জন্য মা-মেয়ে ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিপুনদের বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, কাজলী আক্তার কামিল পাস। জামিরা এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে নিপুন কাজলী আক্তারকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে কাজলীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চায়। তাকে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চাকরি পাওয়ার পর দেওয়ার কথা ছিল। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর কাজলী তার মা জোসনা বেগমকে সাথে নিয়ে নিপুনদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু সারারাত তারা আর বাড়িতে ফিরে যাননি। ৪ সেপ্টেম্বর সকালে বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মোনাকুর্শা গ্রামের একটি নির্জন বাঁশঝাড় থেকে কাজলীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু কাজলীর মা জোসনা বেগমের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাঁশচড়া ইউনিয়নের বড়ইতাইর খালে এক নারীর লাশ ভাসতে দেখে খানায় খবর দেন স্থানীয়রা। সদর থানা পুলিশ ওই খাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে রাত ১০টার দিকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় উপস্থিত শোকার্ত মোস্তফা কামাল তার স্ত্রীর লাশ বলে শনাক্ত করেন। এ সময় থানার সামনে শোকার্ত মোস্তফা কামাল তার স্ত্রী ও মেয়ে হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই বলে কান্নায় মুর্ছা যান। পরে লাশটি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে নিহত কাজলীর সহোদর ছোটবোন মর্জিনা আক্তার বাংলারচিঠিডটকমকে জানান, স্কুলে চাকরির বিষয়ে কথা বলার জন্য ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মাকে নিয়ে কাজলী নিপুনদের বাড়িতে যাওয়ার সময় তাকে বলে গিয়েছিল। কিন্তু ৪ সেপ্টেম্বর সকালে কাজলীর লাশ পাওয়ার পর থেকে নিপুন গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। আজকে আমার মায়েরও লাশ পাওয়া গেল। আমাদের সবকিছু শেষ করে দিছে। এ হত্যার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান তিনি।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ ৫ সেপ্টেম্বর রাতে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, বাঁশচড়া ইউনিয়নের খাল থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা ওই নারী ৩ সেপ্টেম্বর রাতে মেয়ের সাথে নিখোঁজ হওয়া মা জোসনা বেগম বলে পরিবারের স্বজনরা শনাক্ত করেছেন। তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। নৃশংস এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে মামুন মিয়া ও শামীম হাসান নামের দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এছাড়া নিপুনের চাচা ইউপি সদস্য সাজ মাহমুদ সরকার লালুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিপুনকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কাজলীর বাবা মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করবেন। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।