ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির সভাপতি আইনজীবী (এটর্নি এট ল) মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম রাফী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম : মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জামালপুরভিত্তিক আর্তমানবতার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির পাঁচবছরপূর্তি উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর রাতে জামালপুর শহরের মেডিকেল রোডে ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ে আলোচানা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির পাঁচ বছরপূর্তির আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির সভাপতি আইনজীবী (এটর্নি এট ল) মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম রাফী। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ ভাষা সংগ্রামী কয়েস উদ্দিন, জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদা, জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, উন্নয়ন গবেষক তানভীর খান নিউটন, বাংলারচিঠিডটকম এর সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম, দৈনিক আলোচিত জামালপুরের নির্বাহী সম্পাদক কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাযযাদ আনসারী, অধ্যাপক একেএম আশরাফুজ্জামান স্বাধীন, কালের কণ্ঠের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা মনজু, বাংলারচিঠিডটকম এর সহসম্পাদক ও ব্যবসায়ী মো. সানোয়ারুল ইসলাম সান, ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইউছুফ আলী খান সাগর, সদস্য জাকির হোসেন দুলাল প্রমুখ।

আলোচনা সভায় আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম রাফী বলেন, ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির প্রাথমিক স্তরে আমি নিজে এবং আমার কয়েকজন বন্ধুস্বজন রোযা রেখে বেঁচে যাওয়া খাবার অসহায় মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করি। অবশেষ ২০১৫ সালে অসহায় মানুষ যাদের অনেক কষ্ট, একবেলা খাবার জোটে না, এমন অসহায় মানুষদের খুঁজে বের করি। তালিকা করি। তাদের প্রত্যেককে আমৃত্যু মেয়াদের একটি করে কার্ড দেওয়া হয় সোসাইটির পক্ষ থেকে। নির্দিষ্ট একটি দোকান বা পয়েন্ট ঠিক করা আছে। তারা কার্ড নিয়ে গেলেই তাদের জন্য বরাদ্দের সপ্তাহের প্রতিবেলা খাবারের চাল ও অন্যান্য সামগ্রী নিতে পারেন।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলারচিঠিডটকম এর সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

তিনি আরো বলেন, সমাজের অসহায় মানুষদের মাঝে আমৃত্যু বিনামূল্যে খাবার বিতরণের এই কার্যক্রম জামালপুর থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া, কুড়িগ্রাম ও সিলেট এই পাঁচ জেলায় এর কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই শুভ দিন পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে সর্বমোট ১৫০ জন দরিদ্র অসহায় মানুষকে ইতিমধ্যে ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটি থেকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারা আমৃত্যু এই সংস্থা থেকে প্রতি সপ্তাহে খাবার পাবেন। ইতিমধ্যে কার্ডধারী দরিদ্রদের মাঝে ৩ লাখ ২৫ হাজার বেলার খাবার বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এই কর্মসূচি চালু করা হবে। সমাজের স্বাবলম্বী মানুষদেরকে এই প্রজেক্টে সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান তিনি।

মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম রাফী আরো বলেন, ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটি কারো সরাসরি অনুদানে চলে না। আমাদের সেই ধরনের কোন উদ্দেশ্যও নেই। ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটিতে ইতিমধ্যে যারা অনুদান দিয়েছেন তারা তাদের দৈনন্দিন খাবারের খরচ বা অন্য কোন খরচ থেকে সামান্য কিছু টাকা বাঁচিয়ে অসহায় মানুষদের জন্য দিয়েছেন। তার মানে হলো সবাই কিছু না কিছু ত্যাগ স্বীকার করে সেই অর্থ বা টাকা অন্যের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। এই যে ত্যাগের বিনিময়ে মানুষের সেবা, এর মধ্যে একটা তৃপ্তি আছে। একজন কার্ডধারী দরিদ্র অসহায় মানুষকে আমৃত্যু তার প্রতিবেলার খাবারের নিশ্চয়তা পূরণ করা সত্যি খুব কঠিন কাজ। এই কার্যক্রম যাতে আজীবন অব্যাহত থাকে ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটি সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। আমাদের এই কার্যক্রমে যে কেউ তার সেবামূলক মনোভাব নিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলেই ফাস্ট ফর হাঙ্গার সোসাইটির আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত থেকে অসহায় মানুষদের খাবারের চাহিদা পূরণের মতো এই ধরনের ব্যক্তিক্রমী মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তারা এই সোসাইটির কার্যক্রমকে আরো অনেক অসহায় মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে যার যার অবস্থান থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সমাজের সেবামনা সামর্থবান মানুষদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান বক্তারা। এ অনুষ্ঠান আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার ছিল বাংলারচিঠিডটকম।