শেরপুরে নিখোঁজের ১৯ দিন পর শশ্মানঘাট থেকে অটোচালকের গলিত মরদেহ উদ্ধার

মাটি খুড়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: সিসিটিভি ফুটেজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিখোঁজ হওয়ার ১৯ দিনের মাথায় শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় থেকে হোসেন আলী (৩৫) নামে এক অটোরিকশাচালকের গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১৪। ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নওকুচি গ্রামের শশ্মানঘাট এলাকার আকাশমণি গাছের বাগান থেকে মাটি খুড়ে ওই লাশ উদ্ধার হয়। হোসেন আলী পার্শ্ববর্তী উপজেলা শ্রীবরদী পৌরসভার শেখদী এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব দুইজনকে আটক করেছে। তারা হলেন- ঝিনাইগাতীর নওকুচি গ্রামের মৃত মফিজউদ্দিনের ছেলে সুমেল রানা (৩২) ও শ্রীবরদীর ভেলুয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুজন মিয়া (৩২)।

র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানায়, হোসেন আলী গেল ২৬ নভেম্বর সকালে তার অটোরিকশা নিয়ে শ্রীবরদীর শেখদী এলাকার বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। এ ঘটনায় হোসেন আলীর বড় ভাই আবুল কাশেম ২৯ নভেম্বর শ্রীবরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। সেই সাথে ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব-১৪ জামালপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি অবহিত করে।

হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক দুজন। ছবি: বাংলারচিঠিডটকম

পরে র‌্যাব গোয়েন্দা তদন্তের মাধ্যমে ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে সুমেল রানা ও সুজনকে আটক করে। এ সময় তাদের দেওয়া তথ্যে ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে র‌্যাব সদস্যরা ঝিনাইগাতীর নওকুচি গ্রামের শশ্মানঘাট এলাকার আকাশমণি গাছের বাগান থেকে একটি পাহাড়ী টিলার মাটি খুড়ে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় হোসেন আলীর গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

লাশ উদ্ধারের সময় র‌্যাব-১৪ জামালপুরের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃনাল কান্তি সাহাসহ অন্যান্য র‌্যাব কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাল আবেদীন, বিজিবি, নকশী সীমান্ত ফাঁড়ি ও ঝিনাইগাতী থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আটক সুমেল রানা ও সুজন জানায়, গেল ২৬ নভেম্বর অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তারা যাত্রীবেশে হোসেন আলীর অটোরিকশা ভাড়া করে গারো পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে হত্যা করে মাটির নীচে পুঁতে রাখে।

নিহতের ভাই আবুল কাশেম বলেন, নিখোঁজ হওয়ার দুইদিন পর হোসেনকে না পেয়ে শ্রীবরদী থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। এছাড়া ভাইকে খুঁজে পেতে স্ব উদ্যোগে আমরা বেশ কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকায় খবর নেই। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে যে যাত্রী শ্রীবরদী থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে নিয়ে যায় তার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে থানায় ও র‌্যাব কার্যালয়ে জমা দেই। পরে আজ (১৪ ডিসেম্বর) পুলিশ প্রশাসনের লোকজন পাহাড়ি বনাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে আমার ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।

র‌্যাব-১৪, জামালপুরের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক সুমেল রানা ও সুজন মিয়া হোসেন আলীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া অটোরিকশা থেকে ব্যাটারিটি খুলে নিয়ে তা ঝিনাইগাতী বাজারে বিক্রি করার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঝিনাইগাতী থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।