‘সেই দু’টি ভোট জানালার বাইরে কিভাবে গেলো’

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম : ভোট গ্রহণকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোট গণনার সময় আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমার ফুটবল মার্কার দুইটি ব্যালট পেপার স্কুলের জানালার পাশে ফেলে দিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রমজান আলীর টিউবওয়েল প্রতীককে দুই ভোট বেশি দেখিয়ে ভোট গণনা শেষে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

১২ ডিসেম্বর দুপুরে এমন অভিযোগ করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার বনেশ্বর্দী ইউপি’র ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটবল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী এ কে আজাদ।

জানা যায়, এ কে আজাদ এর আগেও ওই এলাকা থেকে পরপর দুইবার মেম্বার নির্বাচিত হন।

এ কে আজাদ বলেন, তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে গেল ২৮ নভেম্বর বানেশ্বর্দী দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বিবিরচর রহমানিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রভাষক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। ওই দিন ভোট গণনা শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর তার ছেলে আতিকুল ইসলাম রাতে ভোট কেন্দ্রের জানালার পাশে একটি খাতা পড়ে থাকতে দেখে। পরে ওই খাতাটি খুলে দেখে সেখানে মেম্বার পদে নির্বাচনের দুটি ব্যালট পেপার। ওই ব্যালটে আমার ফুটবল প্রতীকের পক্ষে সিল দেওয়া আছে।

বর্তমানে ওই দু’টি ব্যালট পেপার তার কাছে সংরক্ষিত আছে বলে জানান।

এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাকে যে ভোটের ব্যবধানে পরাজিত ঘোষণা করা করা হলো, সেই দু’টি ভোট জানালার বাইরে কিভাবে গেলো।

ওই কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গণনা বা আবারও ভোট গ্রহণের দাবি এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তিনি ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এছাড়া বিষয়টি নির্বাচনের পরদিন ২৯ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের ওসিকেও লিখিতভাবে অবহিত করা হয়।

পরে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে পুনরায় ভোট গণনার দাবিতে উপজেলার বানেশ্বর্দী ইউপির বানেশ্বর্দী দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শতশত নারী-পুরুষ এ কে আজাদের পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।

এ বিষয়ে এ কে আজাদ আরও বলেন, বানেশ্বর্দী ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে আমি (ফুটবল) প্রতীক, মোফাখখারুল ইসলাম (তালা) প্রতীক, রমজান আলী (টিউবওয়েল) প্রতীক ও শাহ আলী (মোরগ) প্রতীক নিয়ে লড়াই করি। ভোট গণনা শেষে প্রথমে আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এ খবর পেয়ে আমার কর্মী-সমর্থকরা বিজয় উল্লাস শুরু করেন। কিন্তু এ ঘোষণার আধা ঘন্টা পরেই আমার ফুটবল প্রতীকের ও প্রতিদ্বন্দ্বী রমজান আলীর টিউবওয়েল প্রতীকের ভোট সমান সমান ঘোষণা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরে অজ্ঞাত শক্তির প্রভাবে রমজান আলীর পক্ষে (টিউবওয়েল প্রতীক) দুই ভোট বেশি দেখিয়ে এবং আমাকে দুই ভোট কম দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে দ্রুত কেন্দ্র ত্যাগ করেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যদি শীঘ্রই এ বিষয়ে তিনি কোন প্রতিকার না পান তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করবেন।

আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রভাষক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বলেন, উভয় প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধির সামনে ভোট গণনা করে বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রের পাশে কিভাবে ব্যালট পেপার পাওয়ার গেল এ সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান।

এ সম্পর্কে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শানিয়াজ্জামান বলেন, নির্বাচন বিষয়ে গেজেট প্রকাশের পর যদি কোন প্রার্থীর অভিযোগ থাকে তাহলে সেই প্রার্থী শেরপুরের ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গঠিত ওই ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন একজন সিনিয়র সহকারি জজ। একই সাথে আপিলও দায়ের কারা যাবে ওই আদালতে।