শেরপুরে মহারশির পানি স্থানান্তরে অশনিসংকেত দেখছেন কৃষকরা

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর, বাংলারচিঠিডটকম: শেরপুরের সীমান্তবর্তী এক উপজেলার নদীর পানি কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য অন্য উপজেলায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহের উদ্যোগকে অশনিসংকেত বলে অবিহিত করেছেন হাজারো কৃষক। ক্ষতির আশংকা করা ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষকদের দাবি, মহারশি নদীর পানি পার্শ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলায় দেওয়া হলে এ উপজেলা ক্রমান্বয়ে মরুভ‚মিতে পরিণত হবে। অন্যদিকে ঝিনাইগাতীর কৃষকদের চাষাবাদে চাহিদা পূরণ শেষে পানি উদ্বৃত্ত হলে তা আরেক উপজেলায় সরবরাহ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ঝিনাইগাতীর এলজিইডি’র কার্যালয় এবং অনান্য একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি (জাইকা)’র অর্থায়নে উপজেলার নলকুড়া গ্রামে একটি উপ-রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। এটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় এলজিইডি। পরবর্তীতে এ প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় মহারশি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে। ওই সমিতির সদস্যরা খরা মৌসুমে চাষাবাদের জন্য সেখান থেকে নিবিরভাবে পানি সরবরাহ পেয়ে থাকে। ওই প্রকল্পের ফলে প্রায় এক হাজার দুইশ হেক্টর জমি বোরো আবাদের আওতায় আসে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে আরও ১২শ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ঝিনাইগাতীর উত্তর হলদীগ্রামের কৃষক হারেজ মিয়া বলেন, স্থানীয় আব্দুল্লাহ’র বসত ভিটার পাশে জাইকা’র অর্থায়নে নতুন করে এলজিইডি’র লোকজন বৃহৎ পরিসরে পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করছে। সেখানে মহারশি নদীর পানি সংরক্ষণ করা হবে। ওই প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’। এ প্রকল্প থেকে পরে পাশর্^বর্তী উপজেলা নালিতাবাড়ীতে পানি সরবরাহ করা হবে। এর জন্য চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মোটা পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

মহারশি নদীর পানি নালিতাবাড়ী নেয়ার উদ্যোগকে অশনিসংকেত দেখছেন নলকুড়া গ্রামের কৃষক ইন্তাজ আলী। তিনি বলেন, এ নিয়ে এখানকার হাজারো কৃষক উদ্বিগ্ন।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, ওই নদীর পানি নালিতাবাড়ীতে সরবরাহ করা হলে ঝিনাইগাতীর কৃষকরা শাক-সবজি ও ধান আবাদে মহাসংকটে পড়বে। সেই সাথে পানির অভাবে বিপুল পরিমাণ ফসলি মাঠ পতিত পড়ে থাকবে। ফলে এ এলাকা মরুভ‚মিতে পরিণত হবে।

তবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক।

ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম এ ওয়ারেজ নাঈম বলেন, মহারশি নদীর পানি অন্য উপজেলায় নেয়া হবে বিষয়টি জানা ছিল না। পরে পরিষদের এক আলোচনাসভায় সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান জানান, তার এলাকায় আন্ডার গ্রাউন্ডের মাধ্যমে পাইপ লাইন বসিয়ে রাবারড্যামে আটকে রাখা মহারশি নদীর পানি নালিতাবাড়ীর সমেশ্চুড়া এলাকায় নেয়া হবে।

চেয়ারম্যান এস এম এ ওয়ারেজ নাঈম মনে করেন, মহারশি নদীর পানি নালিতাবাড়ীতে সরবরাহ করা করা হলে ঝিনাইগাতীর কৃষকরা ফসল আবাদে পানির সংকটে পড়ে ক্ষতির শিকার হবেন।

অন্যদিকে বিষয়টির সুরহা চেয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, ঝিনাইগাতীর কৃষকদের চাষাবাদে চাহিদা পূরণ শেষে পানি উদ্বৃত্ত হলে তা আরেক উপজেলায় সরবরাহ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।