বাংলাদেশকে অন্ধকারে তলিয়ে দিয়েছিল জিয়া-এরশাদ-খালেদা : ফেরি উদ্বোধনী সভায় বললেন নৌপ্রতিমন্ত্রী

জামথল-সারিয়াকান্দি ফেরি সার্ভিসের লঞ্চ (সি-ট্রাক) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানমঞ্চে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আজম এমপি ও সাহাদারা মান্নান এমপিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশকে অন্ধকারে তলিয়ে দিয়েছিল জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া। সেই অন্ধকার বাংলাদেশকে আজ আলোর মুখ দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ষোলো কোটি মানুষ আজ বলছে, শেখ হাসিনা শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, শেখ হাসিনা হচ্ছেন বাংলার মানুষের আলোর দিশারী।

১২ আগস্ট দুপুরে যমুনার পূর্বপাড়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা সীমানা সংলগ্ন বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল ঘাটে জামথল-সারিয়াকান্দি ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনী মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপ্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।

নৌপ্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নদীমাতৃক এই বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় ‘যমুনা করিডোর’ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৩ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংকের সাথে ভার্চ্যুয়াল সভা হতে যাচ্ছে এই যমুনার করিডোর প্রকল্প নিয়ে। যমুনা পাড়ের মানুষ যাতে আর নদীভাঙনের শিকার না হয়, তারই স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী। যমুনা পাড়ে লাখ লাখ কোটি টাকার নানামুখী উন্নয়ন কাজ হবে। বিশাল আয়তনের নতুন নতুন ভূমি পাওয়া যাবে। যমুনায় হারিয়ে যাওয়া জমি আবার এই এলাকার মানুষদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যমুনাপাড়ে গড়ে তোলা হবে নতুন নতুন শহর। বদলে যাবে যমুনাপাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। শেখ হাসিনার সরকারের এই মেয়াদের মধ্যেই যমুনা করিডোরের কাজ শুরু হবে বলেও তিনি আশাব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী শাসন নয়, নদী ব্যবস্থাপনা নীতিতে বাংলাদেশের সকল নদ-নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের বাহাদুরাবাদ থেকে শীতলক্ষা পর্যন্ত দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। ড্রেজিং কার্যক্রম শেষ হলে অতীতের ন্যায় বড়বড় জাহাজ যমুনা নদী হয়ে ব্রহ্মপুত্রের জামালপুর, শেরপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জে চলাচল করবে। এই ময়মনসিংহ অঞ্চলের ছোটবড় যত নদী আছে সেই সমীক্ষা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। সেই নদীগুলোও ড্রেজিং করে নদী ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা হবে।

জামথল-সারিয়াকান্দি ফেরি সার্ভিস উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপাতত: এই রুটে যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ চলাচল শুরু হলো। এটি দিনে চারবার যাত্রী পারাপার করবে। এই ঘাটে যাওয়ার জন্য জামথল খেয়াঘাট থকে দক্ষিণে মূলঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার পাকা রাস্তা করে দেওয়া হবে আগামী একমাসের মধ্যে। বিআইডব্লিওউটিএ এর চেয়ারম্যান গোলাম সাদিক আজকে কথা দিলেন আগামী শুকনো মৌসুমে অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই রুটের দুই পাড়ে স্থায়ী ঘাট, পল্টুন নির্মাণসহ সকল অবকাঠামো নির্মাণ শেষে এখানে যাত্রী ও পণ্যবাহী ভারি যানবাহন পারাপার শুরু করা হবে। তখন এই রুটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরি সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। বগুড়া ও জামালপুরবাসীর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে এই রুটে যা যা করা দরকার তার সবই করে দেওয়া হবে।

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের এমপি ও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর-৩ আসনের (মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ) এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদিক, জামালপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মো. মতিউর রহমান, মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুর রহমান বেলাল, সোনাতলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আইনজীবী মিনহাজ উজ জামান লিটন, মাদারগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মির্জা গোলাম কিবরিয়া কবির, প্রয়াত এমপি আব্দুল মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল প্রমুখ।

মতবিনিময় সভা শেষে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আজম এমপি ও সাহাদারা মান্নান এমপি অন্যান্য অতিথিদের নিয়ে জামথল খেয়াঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটর দূরে যমুনার পাড়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ নামের ২০০ আসন বিশিষ্ট লঞ্চের (সি-ট্রাক) উদ্বোধন করেন। প্রথম যাত্রায় দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাটের উদ্দেশে জামথল ঘাট ছেড়ে যায়। পরে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ স্পিডবোটে সারিয়াকান্দির কালিতলা ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এর আগে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আজম এমপি হ্যালিকপ্টারে ঢাকা থেকে বেলা সোয়া ১১টায় যমুনার পূর্বপাড়ের জামথল খেয়াঘাটের অস্থায়ী হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করেন। নৌপ্রতিমন্ত্রী সেখানে ফলক উন্মোচন করে জামথল-সারিয়াকান্দি ফেরি সার্ভিসের লঞ্চ (সি-ট্রাক) উদ্বোধন করে মোনাজাতে অংশ নেন। পরে তিনি সেখানে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।

ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনী মতবিনিময় সভাটি মূলত: বিশাল জনসভায় পরিণত হয়। যমুনার পশ্চিম পাড়ের সারিয়াকান্দি থেকে বড় বড় নৌকাযোগে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এবং জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ উৎসুক হাজারো মানুষের ঢল নামে সভাস্থল ও জামথল খেয়াঘাট এলাকায়। বগুড়া-১ আসনের প্রয়াত এমপি আব্দুল মান্নানের নামে জামথল লঞ্চ ঘাটের নামকরণ করার দাবিতে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে শ্লোগান দিতে দিতে হাজারো মানুষ সভায় যোগ দিতে দেখা যায়।