গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা চলছেই, আরও ৩৩ জন নিহত

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ ১৬ মে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ গত সপ্তাহে শুরু হওয়া সংকটের পর এটি একদিনে সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা৷ খবর এফপি, এপি ও রয়টার্সের।

গাজায় হামলার তীব্রতা আরো বাড়িয়েছে ইসরায়েল৷ ১৬ মে ভোরের আগেই নতুন করে বিমান হামলায় গাজার তিনটি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে৷ এতে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে আট শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ আরো অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন৷

বার্তা সংস্থা এএফপি দুই পক্ষের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ১০ মে থেকে শুরু হওয়া হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৮১ জনে৷ অন্যদিকে ইসরায়েলে মোট মৃতের সংখ্যা ১০ জন৷

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ১৬ মে তারা হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইয়েহইয়েহ সিনওয়ার বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে৷ স্থাপনাটি তাদের সামরিক অবকাঠামো হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলেও দাবি করা হয়৷

এদিকে, দক্ষিণ ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোঁড়া অব্যাহত রেখেছে হামাসও৷ তাদের নেতা ইসমাইল হানিয়ে ১৫ মে কাতারের দোহায় ফিলিস্তিনপন্থিদের একটি ব়্যালিতে বলেছেন, ‘‘ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে প্রতিরোধ উচ্চ স্তরে বাড়বে৷’’

অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘দেশটির সামরিক বাহিনী যতক্ষণ প্রয়োজন গাজায় আঘাত হানা অব্যাহত রাখবে৷’’

এর আগে ১৫ মে আশ-শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি তিনতলা ভবনে বোমা হামলায় দশজন মারা যান, যাদের মধ্যে আট শিশু ও দুই নারী ছিলেন৷ এছাড়া আল-জাজিরা ও অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) এর কার্যালয় থাকা একটি বহুতল ভবন গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ উভয় ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যে হামলা করেছে৷ কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে গণমাধ্যমকে চুপ করাতে এবং গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অপরাধ ঢাকতে এই হামলা চালানো হয়েছে৷

এপির প্রধান নির্বাহী গ্যারি প্রুইট এই হামলায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন৷ পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থাটি বলেছে, গুড়িয়ে দেয়া ভবনটিতে তারা হামাসের অস্তিত্ব বা কার্যক্রম থাকার বিষয়ে কখনও কোন চিহ্ন দেখতে পায়নি৷ এ বিষয়ে ইসরায়েলকে প্রমাণ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে এপি৷

পরবর্তীতে গ্যারি প্রুইটকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন৷ তিনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সমর্থন ব্যক্ত করেন৷

গণমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশনও৷ এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম চালাতে দিতে চায় কীনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি৷ বলেছে, গাজায় অন্য সংবাদমাধ্যমের কার্যলায়গুলোর নিরাপত্তাও এখন প্রশ্নের সম্মুখীন৷

বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

১৬ মে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টুইটারে৷ তিনি মনে করেন, যে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত পরিণতি বয়ে আনতে পারে৷ সহিংসতা থামিয়ে দুই পক্ষকে দুই-রাষ্ট্র বিষয়ক আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানান৷

নিরীহ মানুষজন হতাহত ও শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ ‘‘মানুষ ভবিষ্যত গড়তে নয়, ধ্বংস করতে চায় – তাদের মৃত্যু সেই সংকেতই দিচ্ছে… এই ঘৃণা আর প্রতিশোধ আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে?” সেইন্ট পিটার্স স্কয়ারে সাপ্তাহিক বক্তৃতায় বলেন ফ্রান্সিস৷

এদিকে, ১৬ মে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ৷ ইইউ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জরুরি আলোচনায় বসবেন মঙ্গলবার৷ অন্যদিকে ৫৭ দেশের অর্গানাইজেন অব ইসলামিক কোঅপারেশন- ওআইসি ১৬ মে জরুরি বৈঠক ডেকেছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটের পর এটি তাদের প্রথম উদ্যোগ৷

ফিলিস্তিনিদের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করা হচ্ছে উল্লেখ করে ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ৷ সামরিক অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷

১৫ মে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় শহরগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন মানুষ৷