এলাকাবাসীর সড়ক অবরোধ, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, তদন্ত সম্পন্ন

চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে জামালপুর শহরের বকুলতলা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

চিকিৎসকের অবহেলায় মারা যাওয়া এক নারীর স্বজনদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে জামালপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরের বকুলতলা মোড়ে ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে এ কর্মসূচি পালন করে ইকবালপুর এলাকাবাসী। অন্যদিকে চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতির কারণে সদর হাসপাতালসহ জেলার সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

জামালপুর শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়কের বকুলতলা মোড়ে ২৯ ডিসেম্বর বেলা ১২টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ চলে। শহরের ইকবালপুর এলাকা থেকে মৃত নারীর শোকার্ত স্বজন ও কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগী করিমনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে জড়িত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ঘন্টাব্যাপী স্থায়ী এ সমাবেশ চলাকালে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইকবালপুর এলাকার মো. আব্দুর রহমান, শামীম আহমেদ, বিজু আহমেদ, আমিনুর ইসলাম মিঠু, মাহবুবুর রহমান জিলানী, বিষ্ণচন্দ্র মন্ডল, আব্দুস ছালাম আজাদ, সাগর প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় ইকবালপুরের ষাটোর্ধ নারী করিমনের মৃত্যুর প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও কর্মচারীরা রোগীর স্বজনদের মারপিট করে এবং একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। কিন্তু নিজেদের অপরাধ এড়াতে উল্টো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদকারী স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের ও দু’জনকে গ্রেপ্তারসহ নানাভাবে হুমকি ও হয়রানি করছে। রোগীর স্বজনদের ওপর হামলাকারী চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তি এবং রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান বক্তারা। একই সাথে মৃত ওই রোগীর স্বজন গ্রেপ্তার সাইদুর রহমান ও শহিদুল ইসলামের মুক্তির দাবিও জানান তারা। তাদের দাবি না মানা হলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হতে পারে বলেও ঘোষণা দেন সমাবেশের বক্তারা।

চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ তুলে ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে জামালপুর শহরের বকুলতলা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

অপরদিকে জামালপুর সদর থানার ওসি প্রত্যাহারসহ চারদফা দাবিতে সদর হাসপাতালসহ জেলার সকল হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা একেবারেই অচল হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের আন্দোলনের চতুর্থদিনের মাথায় ২৯ ডিসেম্বর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন। ফলে সবগুলো ওয়ার্ড ক্রমেই রোগীশূন্য হয়ে পড়ছে। বহির্বিভাগে চেম্বারে কোন চিকিৎসক উপস্থিত না থাকায় শতশত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

এদিকে হাসপাতালের ঘটনায় গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান।

জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, হাসপাতালে হামলা, ভাংচুর ও চিকিৎসকদের নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ২৯ ডিসেম্বর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হলে চিকিৎসকরা কাজে ফিরে যাবেন। নয়তো বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি আসতে পারে।