ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয়ে মাঠে মাদারগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেগুনের ক্ষেত থেকে মরে যাওয়া গাছগুলি তুলে আবার নতুন সবজিচাষে প্রস্তুতি নিচ্ছে এক কৃষক। ছবিটি মাদারগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর থেকে তোলা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জাহিদুর রহমান উজ্জল, মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও প্রলয়ংকারী বন্যায় জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় কৃষি খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই হিসাবে এই তথ্য জানিয়েছেন। অপূরনীয় ক্ষতির পরেও আবার কৃষকরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, কোমড় বেঁধে আবার নেমে পড়েছেন ফসেলের ক্ষেতে।

এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মাদারগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার সব অঞ্চল তলিয়ে যায়। তীব্র¯্রােত আর নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশাল এলাকা। তছনছ হয়ে যায় অবকাঠামোর উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, পাকারাস্তা, বাঁধসহ ঘরবাড়ি। তার সাথে কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি হয়েছে অপুরনীয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় উপজেলায় সাড়ে ১৮ হাজার কৃষক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আবাদী ৫ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমির রোপা আমণ বীজতলা, আউস, পাট, শাকসবজি, কলা, তিল, মরিচ তলিয়ে যায়। এ মধ্যে রোপা আমণ বীজতলা ৭৫০ হেক্টর, আউস ৭১৫ হেক্টর, পাট ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর, তিল ১০ হেক্টর, কলা ১০ হেক্টর ও মরিচ ১০ হেক্টর। যার বাজার মূল্যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি।

৪ দফার বন্যার পর হতাশ হয়ে যাওয়া কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবার কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তারা ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্ঠা করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত কৃষি উপকরণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের সবজি চাষী মোজাম্মেল হক জানান, বন্যায় তার কয়েক বিঘা জমির পেঁপেঁসহ অন্যান্য সবজির ক্ষতি হয়েছে। মরিচ, শাকসবজি মিলে তার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের ক্ষতিটা ব্যাপক। তাই বন্যার পর আবার তিনি চাষবাদে নেমে পড়বেন। তিনি জানান, সরকার যদি একটু সহযোগিতা করেন, তাহলে তিনি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

একই ইউনিয়নের কামরিয়া গ্রামের সবজি চাষী কৃষক টুনু মিয়া জানান, প্রতিবছর এই সময় শসা, মরিচ এবং নানান শাকসবজি চাষ করে ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেটে পাঠান। এবার বন্যায় সব শেষ করে দিয়েছে। আসন্ন শীত মৌসুম হলো এই এলাকার কৃষকদের জন্য মরিচ আবাদের সময়। এখনো ক্ষেতে পানি থাকায় মরিচের চারা ফেলতে পারছেন না। ফলে বগুড়া, পাবনা, নওগা থেকে থেকে বেশি দামে চারা কিনে তারা লোকসানের ভাগে পড়তে পারেন। তবুও তারা হারবার নয়। কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তবে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে রোপা আমণের বীজ সংকটে পড়েছে হাজার হাজার চাষী। তারা বন্যায় বীজতলা হারিয়ে আসান্ন রোপা আমণের শেষ সময়ে আমণ চারার জন্য হন্নে হয়ে ঘুরছেন। আগের চেয়ে ৪/৫ গুণ চড়া দামে তারা টাঙ্গাইলের পাহাড়ি এলাকা থেকে আমণ চারা সংগ্রহ করছেন। ঝুঁকি নিয়ে আবার মাঠে নেমেছেন।

মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মাদারগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের সহযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত কৃষি উপকরণ বিতরণসহ কৃষি পুনর্বাসনের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। যাতে তারা সার, বীজ, আমণের চারা, কীটনাশক এবং সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদানে ইতোমধ্যে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। একজন কৃষকও এই সহযোগিতা থেকে বাদ যাবে না। তাদের সহযোগিতা করে কৃষির বিরাট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।