শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ১৯ জুলাই সকালে সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসএই) জিয়াসমিন খাতুন। তিনি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বর্তমানে বিপদসীমার ০.০২ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া জেলার শ্রীবরদী উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী, ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নকলার ৩-৪টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। এ কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় লাখো মানুষ। এখন বন্যার পানির নিচে তলিয়ে আছে চলতি আমন মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জমির বীজতলা। এছাড়া শেরপুর-জামালপুর সড়কের কজওয়ে পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় শেরপুরের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

চরপক্ষীমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আকবর আলী বলেন, নতুন ভাগলগড় গ্রামটি পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ৬শ’ পরিবার পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার ১০-১৫টি বাড়ি বন্যা পানির তোরে বিলীন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ৬ মেট্রিকটন চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও শেরপুর-১(সদর) আসনের এমপি আতিউর রহমান আতিক। এ সময় তিনিও বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদুজ্জমান বলেন, তার এলাকার মুন্সিরচর, নলবাইদ, চরভাবনা, কেন্দুয়ারচর, চান কাসার, হরিণধরা, মাছপাড়া, ধাতিয়াপাড়া এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। লোকজন এখন নৌকা এবং কলাগাছের ভেলায় করে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আজ কালের মধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন জানান, বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় চরপক্ষীমারী ও কামারেরচর ইউনিয়নের জনসাধারণের মাঝে ১২ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আলু, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি এবং খাবার স্যালাইনও রয়েছে বিতরণের তালিকায়।

বন্যায় আমন ধানের বীজতলা ক্ষতি হয়েছে স্বীকার করে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে জেলা সিভিল সার্জন চিকিৎসক অনোয়ারুর রউফ বলেন, বন্যায় পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দিতে ইতোমধ্যে ২০টি মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবেন বলে তিনি জানান।