সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য : জামালপুরে মতবিনিময় সভায় সুলতানা কামাল

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়’ এই গানের সূত্র ধরে সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে হলে রাষ্ট্রকে আরো বেশি সমার্থক হতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য কোনো সরকারই মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে না। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ তাই সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের উপর জনগণ যাতে বিরূপ হয়ে না উঠে এরজন্য সরকারকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

মানবাধিকার কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে আত্মচেতনা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ সমুন্নত রেখে নিজ ঘর থেকে মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করতে হবে। একটা মুরগি তার বাচ্চাদের রক্ষা করতে তার পাখনা মেলে রাখে। কেউ আঘাত করতে আসলে পাল্টা খামছে দেয়। অথচ আমরা মানুষ হয়ে প্রতিরোধ করতে পারছি না। আমরা প্রতিটি কাজ করতে গিয়ে ভয়ে থাকি এতে দুর্বৃত্তরা আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠে। আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। এরজন্য সংঘবদ্ধ শক্তির দরকার। আমরা চেষ্টা করছি সারাদেশে এমন একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে। কোনো সরকারের আমলেই মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করতে চায় না। তবে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মানবাধিকার দিবসে এসে কথা বলেছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক।

২২ ডিসেম্বর জামালপুর ডিটিআরসি’র শেওলা হলে উন্নয়ন সংঘ আয়োজিত মানবাধিকার কর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল।

উন্নয়ন সংঘের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলম মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী টিপু সুলতান, উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মিনারা পারভীন, সিডস কর্মসূচির ব্যবস্থাপক এস এ শামসুদ্দিন, রিকল প্রকল্পের সমন্বয়কারী জ্যোৎস্না আক্তার, এনএসভিসি প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী শরিফ উদ্দিন, সাংবাদিক আসমাউল আসিফ, মেহেদী হাসান, ফাতিউল হাফিজ, মানবাধিকার কর্মী শাহানা পারভীন, নূরমহল সিদ্দিকা, সাহানা বেগম প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীবৃন্দ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুলতানা কামাল শেখ হাসিনাকে বাল্যবন্ধু এবং ছোট বেলার খেলার সাথী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই গত ১০ বছরে তাঁর নেতৃত্বে দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনেক উচ্চ আসনে নিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখ করে বলেন দালান কোঠা, রাস্তাঘাট, ব্রীজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নারী, শিশুর উপর সহিংসতা, রাজনৈতিক দর্বৃত্তায়ন আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে রাষ্ট্রকে আরোবেশী মানবিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

সুলতানা কামাল বলেন, এক যোগ এক আমরা দুই না বলে ১১ জন বলতে চাই। অর্থাৎ অধিক শক্তি নিয়ে আমরা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করতে চাই। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে না বরং সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে মাঠে নেমেছি।

সুলতানা কামাল জামালপুরের সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শেলু আকন্দের উপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএস) সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণ প্রকল্পটি (ডিএইচআরএমএস) উন্নয়ন সংঘ জামালপুরে বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের নেতৃত্বদানকারী সংস্থা এমএসএস চেয়ারম্যান হিসেবে সুলতানা কামাল প্রথম জামালপুরে কর্মরত মানবাধিকার কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। সভায় জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলা থেকে উন্নয়ন সংঘ কর্তৃক নির্বাচিত ৩৫ জন মানবাধিকার কর্মীসহ সুধীবৃন্দ সভায় অংশ নেন।