জামালপুর সদরে যত্ন প্রকল্পের কার্ড পেতে টাকা চাওয়ার অভিযোগ

যত্ন প্রকল্পের নাম তালিকাভুক্তির অনিয়মের অভিযোগ জানাতে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াছমিনের কার্যালয়ে অভিযোগ দিতে ভিড় করেন সদরের লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন প্রসূতি নারী। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

মাহমুদুল হাসান মুক্তা, জামালপুর প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য আয় সহায়ক কর্মসূচি যত্ন প্রকল্পের প্রসূতি নারীদের নাম তালিকাভুক্ত করতে মোটা অংকের টাকা চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪ নভেম্বর বিকেলে লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন প্রসূতি নারী সদরের ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে দু’জন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। একই সাথে তাদেরকে যত্ন প্রকল্পে তালিকাভুক্ত করার আবেদন জানান তারা। ইউএনও তাৎক্ষণিক যোগ্য সাতজন নারীর ফরম পূরণ করালেও সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাভুক্ত অতিদরিদ্রদের জন্য আয় সহায়ক কর্মসূচির যত্ন প্রকল্পের তালিকায় নাম দিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকরামুল ইসলাম ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য হাসি বেগম লিলি প্রকল্পের জন্য যোগ্য দরিদ্র প্রসূতী নারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। যারা টাকা দিতে পারবেন না তাদেরকে কার্ড দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন তারা। এ নিয়ে স্থানীয় চরপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গ্রামের অন্তত ১৫-২০ জন প্রসূতি নারী ৪ নভেম্বর দুপুরে জামালপুর সদরের ইউএনও কার্যালয়ে গিয়ে তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। পরে ইউএনও ফরিদা ইয়াছমিন অভিযোগকারীদের মধ্যে প্রকল্পের শর্তানুযায়ী যারা যোগ্য এমন সাতজন নারীকে তাৎক্ষণিক যত্ন প্রকল্পের ফরম পূরণ করান। কিন্তু এ প্রকল্পের সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

চরপাড়া গ্রামের প্রসূতি সাবিনা ইয়াসমিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘যত্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার আমাদের জন্য বিনামূল্যে সেবা দিতে যত্ন প্রকল্পের কার্ড দিচ্ছেন শুনে আমি ইউপি সদস্যদের কাছে যাই। আমার নাম তালিকাভুক্ত করতে ওই ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা ছাড়া কোনো কার্ড পাওয়া যাবে না বলে আমাদের ফরম দেন নাই এবং কোনো কাগজপত্রও জমা নেন নাই।’

তার মতো আরও কয়েকজন প্রসূতি অভিযোগ করে জানান, তারা গরিব মানুষ। দিন আনেন দিন খান। এত টাকা কোথায় পাবেন তারা। ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য তাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়েছিলেন। টাকা না দেওয়ায় তাদের নাম তালিকাভুক্তির ফরম দেওয়া হয়নি। তারা এ ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য মো. ইকরামুল ইসলাম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে ৭৫ জন প্রসূতি নারীকে যত্ন প্রকল্পের কার্ড দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত করে দেন। তালিকা করে তাদের ফরম পূরণসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গত ৩০ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিয়েছি। তালিকায় নাম উঠাতে টাকা চাইছি এরকম অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ একই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য হাসি বেগম লিলিও টাকা দাবি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জামালপুর সদরের ইউএনও ফরিদা ইয়াছমিন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘যত্ন প্রকল্পের তালিকাভুক্তির প্রত্যাশায় কয়েকজন প্রসূতি নারীর অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারীদের মধ্যে এ প্রকল্পের জন্য যোগ্য সাতজন নারীকে আমি তাৎক্ষণিক ফরম পূরণ করিয়ে রেখেছি। আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে প্রকল্পের সার্ভারে এ সংক্রান্ত ডাটাএন্ট্রির অপশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে তালিকাভুক্তি করা যায়নি। তবে পরবর্তীতে সার্ভার চালু হলে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।’ ভুক্তভোগী নারীদের কাছে টাকা চাওয়া বা টাকা নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।