বকশীগঞ্জে এক মাসে তিন ধর্ষণ, দুটি ধর্ষণের চেষ্টা, বেড়েছে পারিবারিক নির্যাতন

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় হঠাৎ সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব ঘটনা অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। গত জুন মাসে তিনটি ধর্ষণ, দুটি ধর্ষণের চেষ্টা ও চারটি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। হঠাৎ এ রকম নৈতিক অবক্ষয়ের ঘটনা ঘটায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে সর্বমহলে।

বকশীগঞ্জ থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র জুন মাসে বকশীগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূ, স্কুলছাত্রী , শিশুসহ তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি দুটি ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে।

গত ৬ জুন বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী গ্রামে নবম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ফেরদৌস আলম। এ ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রীর মা স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত এএসআইকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

১৪ জুন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের খাপড়া গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৫) দুপুরে গরুর ঘাস কাটার জন্য বাড়ির পাশের একটি আখ খেতে যায়। এ সময় একই গ্রামের আজিজ মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২১) আখ খেতে জোরপূর্বক ওই স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধর্ষক সাইফুল ইসলামকে।

১৮ জুন বিকেলে ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের মির্ধা পাড়া গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে (৮) ধর্ষণের চেষ্টা করে একই গ্রামের তারা মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি। পরে ওই ছাত্রীর বাবা থানায় মামলা দায়ের করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি তারা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান ফারুক ও ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামসহ তিন ইউপি সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।

গত ২৬ জুন রাত আটটার দিকে বগারচর ইউনিয়নের দক্ষিণ খাসেরগ্রাম গ্রামের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে (১০) বাড়ির সামনে থেকে মুখ চেপে ধরে তুলে নিয়ে পাশের একটি ক্ষেতে ধর্ষণ করে একই গ্রামের সুরুজ্জামালের ছেলে শাকিল মিয়া ও তার বন্ধু আপন মিয়া।

ধর্ষণের ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর মা বাদী হয়ে বকশীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্ত দুই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে।

২৭ জুন রাতে বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার চরকাউরিয়া সীমার পাড় গ্রামের এক রিকশাচালকের স্ত্রীকে (২৫) তার দুই সন্তানের সামনে ধর্ষণ করে একই এলাকার আরিফুলের ছেলে জামান মিয়া (৩০)। জামান মিয়া ওই গৃহবধূর ঘরে ঢুকে তার দুই সন্তানকে গলায় ছুড়ি ধরে ভয় দেখিয়ে তাদের সামনেই ধর্ষণ করে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলে র‌্যাব-১৪ এর একটি দল পরেরদিন ধর্ষক জামানকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

এছাড়াও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের বকশীগঞ্জ শাখার দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চারটি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যৌতুক ও অন্যান্য কারণে নারীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ।

কিন্ত ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তিতে নেই সচেতন মহলও। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা সেমিনার করে সচেতনতা সৃষ্টি করা হলেও থামানো যাচ্ছে না নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। ধর্ষণের চেষ্টা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটার সাথে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি তা ধামাচাপা দিতে শালিস করায় এসব ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা কোন কোন ঘটনা শালিস করতে পারবেন বা পারবেন না তা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় এসব সমস্যা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মাহবুব আলম বাংলারচঠিডটকমকে বলেন, অসামাজিক কার্যকলাপ রোধে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে ব্যাপক প্রচারণা করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সুধীজনসহ সমাজের সব মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা না আসলে নৈতিক অবক্ষয়ের ঘটনা রোধ করা যাবে না।