ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে বকশীগঞ্জের এক এএসআই ক্লোজড

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ফেরদৌসের (৩২) বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে ২৪ জুন জামালপুর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। ২৫ জুন সকালে ওই ছাত্রীর মা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করে এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন। গত ৬ জুন ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে।

যৌনহয়রানির শিকার ওই ছাত্রীর মা সাধুরপাড়া ইউপির একজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা। বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। অবশেষে ওই ছাত্রীর মা তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টার বিচার চেয়ে ২৫ জুন সকালে জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছেন। ওই কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। এদিকে ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ পাওয়ার আগেই বকশীগঞ্জের বহুল আলোচিত এ ঘটনাটি পুলিশ সুপার জানতে পেরে ২৪ জুন এএসআই ফেরদৌসকে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, যৌনহয়রানির শিকার ওই ছাত্রী উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালের বার্ত্তী কেবি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বয়স আনুমানিক ১৪ বছর। তার মা স্থানীয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে তাদের বাড়িতে যাতায়াতের সুযোগে ওই ছাত্রীর ওপর কুদৃষ্টি পড়ে স্থানীয় কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই ফেরদৌসের। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে মাঝেমধ্যে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে আসছিলেন ফেরদৌস। মাঝেমধ্যে বাড়িতে গিয়েও একই প্রস্তাব দিতেন তিনি। গত ৬ জুন ইউপি সদস্যা বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে ওই দিন বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে এএসআই ফেরদৌস ওই বাড়িতে যান। সেদিন একা পেয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে ফেরদৌস ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ওই ছাত্রী নিজেকে রক্ষা করে চিৎকার দিলে ফেরদৌস দ্রুত দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যান। এ সময় প্রতিবেশীরা তাকে চিনতে পারলেও পুলিশের লোক বলে তাকে কেউ আটক করতে সাহস পায়নি।

ওই ইউপি সদস্যা বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এবং বকশীগঞ্জ থানার ওসিকে জানিয়েও কোনো লাভ হয় নাই। বিষয়টি আমার ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমকেও জানাই। তিনিও মীমাংসা করে দিতে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে বকশীগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম মাহবুব আলম গত ২৩ জুন মেয়েকেসহ আমাকে বকশীগঞ্জ থানায় ডেকে নিয়ে যান।’

ইউপি সদস্যা আরও বলেন, ‘আমার মেয়ের কাছ থেকে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত শুনে ওসি আমাকে তাদের জেলার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে এবং আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। বর্তমানে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে খুবই লজ্জাজনক অবস্থায় সমাজে বসবাস করছি। এ ঘটনার পর থেকে আমার মেয়ে লজ্জায় বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।’

সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল আলম বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘ইউপি সদস্যার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি আমি লোকমুখে শুনেছি। তারা আমার কাছে অভিযোগ করে বিচার প্রার্থনা করে নাই। আমি মীমাংসার কোনো আশ্বাসও দেই নাই। তবে আমি পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনাটির সঠিক তদন্ত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’

এ অভিযোগের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আবু সুফিয়ান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘এএসআই ফেরদৌসকে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে। ভিকটিম মেয়েটির মায়ের অভিযোগের বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এএসআই ফেরদৌসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’