ইংল্যান্ড আসরই হতে যাচ্ছে মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপ

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : সমস্ত জল্পনা-কল্পনার সমাপ্তি ঘটিয়ে মাশরাফি জানিয়ে দিলেন ইংল্যান্ড আসরই হতে যাচ্ছে তার শেষ বিশ্বকাপ। আগামী ৩০ মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হতে যাচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। মেগা এ ইভেন্টের আগে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। আয়ারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ১ মে দেশ ছাড়বে টাইগাররা।

আয়ারল্যান্ড সফর ও বিশ্বকাপে দলের লক্ষ্য, পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয়ে ২৯ এপ্রিল মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এবারের বিশ্বকাপের দল বেশ ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। তাই ভালো করার ব্যাপারে বেশ আশাবাদি ম্যাশ। তবে সেমিফাইনালে পৌঁছানোটা অনেক বড় অর্জন হবে বলে জানান মাশরাফি। ইংল্যান্ড আসরই শেষ বিশ্বকাপ হলেও শেষ ওয়ানডে নয়- এমনটিও স্পস্ট করলেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি।

১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামে বাংলাদেশ। প্রথম বিশ্বকাপেই চমক দেখায় টাইগাররা। পাকিস্তানের মত বিশ্বসেরা দলকে হারিয়ে দেয় তারা। এরপর ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও নিজেদের সেরাটা দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে গ্রুপ পর্ব বা সুপার এইট থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। তবে গেল বিশ্বকাপেই সবচেয়ে বেশি চমক দেখায় মাশরাফির নেতৃত্বাধীন দলটি। কোয়ার্টারফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মত আসরে এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। এবার সেই অর্জনকে আরও বড় করার স্বপ্ন টাইগারদের। সেমিফাইনালে খেলতে পারলে তা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। তবে কাজটি কঠিন বলে মনে করেন তিনি, ‘এই মূর্হুতে মনে হচ্ছে, আমাদের সেমিফাইনালে যাওয়াটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সেমিফাইনালে যদি যেতে পারি তবে সেটি অনেক বড় অর্জন হবে। কারন এবারের ফরম্যাট ১৯৯২ বিশ্বকাপের মত,যা অনেক কঠিন। কিন্তু সেমিফাইনালে যাওয়া অনেক বড় অর্জন। আমরা কয়েকবার সেমিফাইনাল বা কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছি। কিন্তু সেখানে আমরা ঐ চাপটা নিতে পারিনি। তাই সবার আগে চেস্টা বরবো সেমিঢাইনালে পৌঁছতে। সেটা পারলে আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন হবে। তারপর আসলে তো, একই কথা নির্দিষ্ট দিনটিতে ভালো খেলতে হবে ভালো কিছুর জন্য। কিন্তু তা অনেক কঠিন।’

শিরোপা জয়ের সামর্থ্য কতটুকু বাংলাদেশের আছে তাও জানিয়ে দিয়েছে মাশরাফি, ‘অসম্ভব তো কোন কিছুই না। অবশ্যই না। তবে অনেক কঠিন। কারন আগের বিশ্বকাপ যে ফরম্যাটে ছিলো। সেখানে ছিলো যে, আপনি বড় একটা দলকে হারাতে পারলে তাদের ফিরে আসা কঠিন হয়ে যেত। কারন সেখানে লিমিটেড ম্যাচ ছিলো। এখানে নয়টা ম্যাচ। সমস্যা হলেও ঘুড়ে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকছে। আমাদেরও সেখানে খেয়াল রাখতে হবে। শিরোপা জেতার মতো সামর্থ্য অবশ্যই আছে। তবে সমস্যা আমাদের ধারাবাহিকতা। আমরা বড় টুর্নামেন্টে এর আগে শিরোপা জিতিনি। এশিয়া কাপে ফাইনালে পৌঁছা তিনবার মধ্যে একবারও যদি জিততাম, তবে অভ্যাস তৈরি হতো। গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্নায়ু ধরে রাখতে পারিনি।’

এবারের বিশ্বকাপ দলটিকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ বলছেন মাশরাফি। দলগতভাবে পারফরমেন্স করতে পারলে ভালো ফল অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি, ‘অবশ্যই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে অনেক। গত কয়েকবারের তুলানায় এবারের দলটা ব্যালান্সড বলা যায়। যারা জুনিয়র খেলোয়াড় আছে। তাদের বেশিরভাগেরই অন্য ফর্মেটে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এটিই নয় যে, অভিজ্ঞতা থাকলেও ভালো টুর্নামেন্ট খেলা যাবে। অবশ্যই আমাদের সমন্বিত পারফরমেন্স করতে হবে। আর একটা টুর্নামেন্ট যেহেতু নয়টা ম্যাচ। প্রথমেই নয়টা ম্যাচ খেলতে হেেব। তার আগে আয়ারল্যান্ড সিরিজ আছে। কিন্তু নয়টা ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতি আসবে। সেসব ঠিকভাবে হ্যান্ডলিং করার মানসিকতা খুব বেশি জরুরি। উত্থান-পতন থাকবে, কিন্তু পরের ম্যাচে যাতে ঘুড়ে দাঁড়াতে পারি, এই ধরনের মানসিকতা খুব জরুরি। আমার মনে হয়, আয়ারল্যান্ড থেকেই সেটা আমাদের অনুশীলন করতে হবে। যাতে আমরা বিশ্বকাপে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকি।

বিশ্বকাপে মোটেও বাংলাদেশ ফেভারিট নয়। তবে সেরা মঞ্চে বড় কিছু করার ইচ্ছা মাশরাফির, ‘কোন বিচারেই আমরা ফেবারিট নই। তবে আমরা যদি সেরকম ভালো কিছু করতে পারি, তাহলে বিশ্বের সকলেই আমাদের অন্য চোখে দেখবে।’

দলে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়েই সেরাটা দিতে চান মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘ নির্বাচকরা যে দল দিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে এটাকেই সেরা বলতে হবে। আমি মনে করি, সেরা দল নিয়েই আমরা যাচ্ছি।’

তবে দলের ব্যাটসম্যানদের উপর আস্থা রয়েছে মাশরাফির। তিনি বলেন, ‘রান করার সার্মথ্য অবশ্যই আছে। কিন্তু অতীতে হয়তোবা আমাদের বড় রান চেজ করে জেতার রেকর্ড নেই । শ্রীলংকার বিপক্ষে গত বছর তামিমের সেঞ্চুরিতে ৩২৯ রান করেছিলাম। তেমন ব্যাটিং হলে বড় রান করা সম্ভব। কিন্তু অন্যান্য দল যেটা নিয়মিত করছে, সম্প্রতি সময়ে আমাদের তা নেই। কারন একটা কারন হতে আমাদের হোম কন্ডিশনে এত রান হয় না। একটা ব্যাপার। এছাড়া অভ্যাসের একটা ব্যাপার আছে। তবে আমাদের অভিজ্ঞ ব্যাটিং অর্ডার আছে। কিন্তু মাঠের চাপটা সামাল দিয়ে বড় স্কোরও করতে হবে।’

ম্যাচ জয়ের জন্য দলের খেলোয়াড়দের কি-কি করতে হবে সেটিও জানিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দূর করার পরামর্শ ম্যাশের, ‘সেমিফাইনাল বা ফাইনালে উঠে গেলে ভালো করার জন্য দু’টি জিনিস করতে হবে। ব্যাটিংয়ে গেলে দ্রুত উইকেট দেওয়া যাবে না, বোলিংয়ে গেলে আগে উইকেট ফেলতে হবে। আমাদের দুর্বলতা হলো শুরুতেই উইকেট পড়ে যায়। আর ব্যাটিং বা বোলিংয়ে ৪০ ওভারের পর আমরা ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ি। এই সমস্যাটা দূর করতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু করা সম্ভব।’সূত্র : বাসস