অন্তরা সাহাকে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ১

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, জামালপুর ও মমিনুল ইসলাম কিসমত, সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অন্তরা সাহা (১৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের সাঞ্চেরপাড় গ্রামে তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই গ্রামের ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহার মেয়ে। তাকে উত্যক্ত ও আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে ২৩ এপ্রিল সরিষাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ওই মামলার একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

সরিষাবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, মেয়েকে উত্যক্ত করা ও সেলফি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে অন্তরা সাহার বাবা নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে ২৩ এপ্রিল সরিষাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ঘটনার মূলহোতা স্থানীয় মূলবাড়ি এলাকার মো. মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মো. তৌহিদুর রহমান তালুকদার ওরফে তানিন ও তার সহযোগী ছয়জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সরিষাবাড়ী থানার উপপদির্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ২৩ এপ্রিল দুপুরে সরিষাবাড়ী পৌরসভার মূলবাড়ি এলাকা থেকে ওই মামলার আসামি পোগলদিঘা ইউনিয়নের পুঠিয়ারপাড় গ্রামের কালু তালুকদারের ছেলে রিয়াদ তালুকদারকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে। একই দিনে পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে অন্তরা সাহার মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ঘটনার মূলহোতা তানিন ও তার অন্যান্য সহযোগীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অন্তরা সাহা সরিষাবাড়ী পৌর এলাকার সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সে ২২ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় আরামনগর বাজারের একটি কোচিং সেন্টার থেকে পড়া শেষে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে বাড়িতে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মা নমিতা রাণী সাহা তাকে না পেয়ে ঘরে তার কক্ষে খুঁজতে যান। তিনি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে তাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ির লোকজন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে অন্তরাকে ঘরের ধর্ণার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। রাতেই তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. সাহেদুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই ছাত্রীর শোকার্ত বাবা নারায়ণ চন্দ্র সাহা অভিযোগ করে বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘তানিন পঞ্চম শ্রেণি থেকেই আমার মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছিল। ২০ এপ্রিল বাড়ি থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে অন্তরার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে মুখচেপে ধরে সেলফি তুলে তানিন। ওই সেলফি তার ফেসবুকে এবং ফেসবুকের মেসেনজারে তার বন্ধুদের কাছেও ছড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন সময়ে উত্যক্ত করার পাশাপাশি ফেসবুকে ছবি দেওয়ার পর থেকেই অন্তরা মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলো। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

এদিকে জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাছির উদ্দিন ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় সাঞ্চেরপাড় গ্রামে অন্তরা সাহাদের বাড়িতে যান এবং তার বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় লোকজনদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি অন্তরা সাহার মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার যাতে ন্যায় বিচার পায় তার আশ্বাস দেন। পরে তিনি সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. জোহায়ের ইসলামকে সাথে নিয়ে সরিষাবাড়ী পৌরসভার জালুপাড়া শ্মশান ঘাটে অন্তরা সাহার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেন।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ‘অন্তরার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা নারায়ণ চন্দ্র সাহার দায়ের করা মামলার আসামিদের মধ্যে রিয়াদ তালুকদার নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’