বাংলাদেশের দরকার ৮ উইকেট, জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ৩৬৭ রান

বাংলারচিঠি ডটকম ডেস্ক॥
ঢাকা টেস্ট জয়ের জন্য ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ৮ উইকেট, জিম্বাবুয়ের ৩৬৭ রান। জিম্বাবুয়েকে ফলো-অন না করিয়ে ম্যাচের তৃতীয় ও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং-এ নেমে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ১০১ ও মোহাম্মদ মিথুনের ৬৭ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ২২৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ২১৮ রানের লিড ছিলো বাংলাদেশ। অর্থাৎ ম্যাচ জয়ের জন্য জিম্বাবুয়েকে ৪৪৩ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে চতুর্থ দিন শেষে ২ উইকেটে ৭৬ রান করে জিম্বাবুয়ে।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচের তৃতীয় দিনই জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে বাংলাদেশের করা ৫২২ রানে জবাবে ৩০৪ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ফলে ২১৮ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো-অনে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তবে ফলো-অনের ব্যাপারে তৃতীয় দিন কিছুই জানায়নি বাংলাদেশ। নিজেদের সিদ্বান্তকে রহস্যের মধ্যেই রেখেছিলো তারা। কিন্তু চতুর্থ দিন সকালে নিজেদের রহস্য ফাঁস করে টাইগাররা। জিম্বাবুয়েকে ফলো-অন না করিয়ে নিজেরাই ব্যাটিং-এ নামে বাংলাদেশ।

ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ৯, ১০, ১০ ও ২৫ রানে চারটি উইকেট হারায় টাইগাররা। সবার আগে ফিরেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। এরপর ইমরুলের পথ অনুসরণ করেন লিটন, মোমিনুল ও প্রথম ইনিংসের ডাবল-সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম। ইমরুল ৩, লিটন ৬, মোমিনুল ১ ও মুশফিক ৭ রান করেন। বাংলাদেশের চার ব্যাটসম্যানকে ভাগাভাগি করে শিকার করেছেন জিম্বাবুয়ের দুই পেসার কাইল জার্ভিস ও ডোনাল্ড তিরিপানো।

২৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে মহাচিন্তায় পড়ে স্বাগতিকরা। এমন অবস্থায় প্যাভিলিয়নে অধিনায়কের সাথে বেশ কয়েকবারই আলাদা কথা বলতে দেখা গেছে কোচ স্টিভ রোডসকে। কথা বলা শেষে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহকে ঘাড়ে হাত দিয়ে উৎসাহ দেয়ার ভঙ্গিমাও করেছেন রোডস। কোচের কাছ থেকেই সাহস নিয়ে ক্রিজে যান মাহমুদুল্লাহ। তখন ক্রিজে ছিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা মোহাম্মদ মিথুন। তিনি নিজেও ডাবল চিন্তায় ছিলেন। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফিরে যাবার চাপের সাথে দলের মহাবিপদে পড়ার চিন্তা ছিলো মিথুনেরও।

উইকেটে গিয়ে মিথুনের সাথে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান মাহমুদুল্লাহ। সেটি ছিলো, দেখে শুনে ধীরলয়ে রান তোলা। কাজটি ভালোভাবে করেছেন দু’জনে। উইকেটের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল করছেন মিথুন ও মাহমুদুল্লাহ। ফলে শত রান পেরিয়ে দলীয় স্কোর দেড়শ দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এর মাঝে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মিথুন। কিছুক্ষণবাদে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল্লাহও।

তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি বড় করার চেষ্টা করে ব্যর্থই হয়েছেন মিথুন। জিম্বাবুয়ের অফ-স্পিনার সিকান্দার রাজাকে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১০ বলে ৬৭ রান করেন মিথুন। পঞ্চম উইকেটে ১৬৩ বল মোকাবেলা করে ১১৮ রান যোগ করেন মিথুন-মাহমুদুল্লাহ জুটি।

মিথুনের ফেরার সময় মাহমুদুল্লাহর রান ৫৩। এ অবস্থায় দলের লিড বড় করাই প্রধান লক্ষ্য ছিলো অধিনায়কের। কিন্তু সাত নম্বরে নামা আরিফুল হক হতাশ করেন। ৫ রান করে ফিরেন তিনি। এতে টেল-এন্ডারদের নিয়ে দলের স্কোর কোথায় নিয়ে যেতে পারেন মাহমুদুল্লাহ, সেটিই দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

মাহমুদুল্লাহ সফল হয়েছেন, দল ও নিজের জন্য। দলের স্কোর ভালো অবস্থানে তো পৌঁছে দিয়েছেনই, সেই সাথে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ। আট বছরের বেশি সময় পর দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ ও সর্বপ্রথম ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। নিজের সেঞ্চুরির পরই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ঘোষণা দেন মাহমুদুল্লাহ। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১২২ বলে অপরাজিত ১০১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। মিরাজের সংগ্রহ ছিলো অপরাজিত ২৭ রান। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ-মিরাজ। ৬ উইকেটে ২২৪ রানে ইনিংস ঘোষণা দেয়ায় ম্যাচ জয়ের জন্য ৪৪৩ রানের লক্ষ্য পায় জিম্বাবুয়ে।

সেই লক্ষ্যে দিনের শেষ সেশনে ৩০ ওভার ব্যাট করে ২ উইকেটে ৭৬ রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে। অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ২৫ ও ব্রায়ান চারি ৪৩ রানে ফিরেন। ব্রেন্ডন টেইলর ৪ ও সিন উইলিয়ামস ২ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের তাইজুল ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।

স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫২২/৭ডি, ১৬০ ওভার (মুশফিক ২১৯*, মোমিনুল ১৬১, জার্ভিস ৫/৭১)।
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ৩০৪/১০, ১০৫.৩ ওভার (টেইলর ১১০, মুর ৮৩, তাইজুল ৫/১০৭)্।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
লিটন দাস বোল্ড ব জার্ভিস ৬
ইমরুল কায়েস ক মাভুতা ব জার্ভিস ৩
মোমিনুল হক ক চাকাভা ব তিরিপানো ১
মোহাম্মদ মিথুন ক চাকাভা রাজা ৬৭
মুশফিকুর রহিম ক মাভুতা ব তিরিপানো ৭
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ১০১
আরিফুল হক বোল্ড ব উইলিয়ামস ৫
মেহেদি হাসান মিরাজ অপরাজিত ২৭
অতিরিক্ত (বা-৫, লে বা-১, ও-১) ৭
মোট (৬ উইকেট ডি, ৫৪ ওভার) ২২৪
উইকেট পতন : ১/৯ (ইমরুল), ২/১০ (লিটন), ৩/১০ (মোমিনুল), ৪/২৫ (মুশফিকুর), ৫/১৪৩ (মিথুন), ৬/১৫১ (আরিফুল)।
জিম্বাবুয়ে বোলিং :
কাইল জার্ভিস : ১১-২-২৭-২,
ডোনাল্ড রিপানো : ১১-১-৩১-২,
সিন উইলিয়ামস : ১৬-২-৬৯-১ (ও-১),
সিকান্দার রাজা : ৭-০-৩৯-১,
ব্রান্ডন মাভুতা : ৯-০-৫২-০।
জিম্বাবুয়ে ইনিংস :
হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ক মোমিনুল ব মিরাজ ২৫
ব্রায়ান চারি এলবিডব্লু ব তাইজুল ৪৩
ব্রেন্ডন টেইলর অপরাজিত ৪
সিন উইলিয়মস অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-১) ২
মোট (২ উইকেট, ৩০ ওভার) ৭৬
উইকেট পতন : ১/৬৮ (মাসাকাদজা), ২/৭০ (চারি)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজুর : ৩-১-২-০,
তাইজুল : ১৩-২-৩৪-১,
খালেদ : ৪-১-১৫-০,
মিরাজ : ৭-২-১৬-১,
আরিফুল : ৩-১-৭-০।
সূত্র : বাসস