বকশীগঞ্জে ছেলের আঘাতে পিতা নিহত

উঠানো পাড়ায় লাশ দেখতে গ্রামবাসীদের ভিড়। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠি ডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ছেলের হাতুড়ির আঘাতে বৃদ্ধ পিতা মো. আবু সাঈদ (৬৫) নিহত এবং পাঁচ বছর বয়সী ভাতিজি লিমা আক্তারকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। ১৮ অক্টোবর ভোররাতে উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের উঠানোপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিশু লিমাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘাতক ছেলে মো. স্বপনকে (২৮) পুলিশ আটক করেছে। নিহত আবু সাঈদ ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের উঠানোপাড়া গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান স্বপন দিনাজপুরের মোমেনা আক্তার নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে মোমেনা আক্তার ১৭ অক্টোবর বিকেলে তার বাপের বাড়ি দিনাজপুরে চলে যান। স্বামী স্বপন বুধবার রাতে বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী চলে যাওয়ার কথা শুনে মোমেনাকে দিনাজপুরে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে তার বাবা-মাকে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে স্বপন বাবা-মার সাথে ঝগড়া করে।

বৃদ্ধ আবু সাঈদের লাশ। ছবি : বাংলারচিঠি ডটকম

এক পর্যায়ে ১৮ অক্টোবর ভোররাত তিনটার দিকে স্বপন তার ঘুমন্ত বাবা-মার ওপর হামলা করে। প্রথমে সে হাতুড়ি দিয়ে তার বাবা আবু সাঈদের মাথায় আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। পাশে থাকা তার মা হাছেনা বেগম দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পান। এরপর স্বপন তার বড় ভাইয়ের মেয়ে লিমা আক্তারের মাথায় দা দিয়ে কোপ দেয়। এতে লিমা আক্তার গুরুতর আহত হয়। এ সময় পাশের ঘর থেকে স্বপনের বড় ভাই রিপন ছুটে গিয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় স্বপনকে আটক করে বেঁধে রাখে। এ ঘটনার পর আজ ভোরে গুরুতর আহত আবু সাঈদ ও শিশু লিমা আক্তারকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু সাঈদকে মৃত ঘোষণা করেন। তার নাতনি লিমা আক্তারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে ১৮ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে নিহত আবু সাঈদের লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তার বাড়ি উঠানোপাড়ায় নিয়ে গেলে স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ লাশ দেখতে ভিড় করেন এবং এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন। বকশীগঞ্জ থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই বাড়ি থেকে নিহত আবু সাঈদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। একই সাথে পুলিশ স্বপনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে নিহতের ছেলে মো. রিপন বাদী হয়ে স্বপনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাওহিদুর রহমান বাংলারচিঠি ডটকমকে বলেন, ‘এ ঘটনায় মৃত আবু সাঈদের ছেলে স্বপনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের ছেলে মো. রিপন বাদী হয়ে এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামি স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জামালপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’