ঢাকা ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ তহবিল চালু ঝিনাইগাতীতে পানিতে নিখোঁজ কিশোরের মরদেহ উদ্ধার অধিকার রক্ষায় শেরপুরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত জামালপুরে বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নতুন কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে ওয়ারেছ আলী মামুন সংবর্ধিত নদী ভাঙনের কবল থেকে মসজিদ ফসলি জমি রক্ষার দাবিতে বকশীগঞ্জে মানববন্ধন দুর্গাপূজার প্রস্তুতি সভা করেছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জামাল পাশা, শাহেদ আলী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার ব্যস্ততা চলছে মাদারগঞ্জের প্রতিমাশিল্পীদের, ২৭ মণ্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি দেওয়ানগঞ্জে উপহারের বেশির ভাগ ঘরের দরজায় ঝুলছে তালা

বকশীগঞ্জে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ফসলি জমি

জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু, বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের বকশীগঞ্জে তিনটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদী। সেই নদ ও নদী বরাবরের মতই চিরচেনা রূপে ফিরেছে আবার। উপজেলার ১০টি গ্রামে নদ-নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব। সম্প্রতি বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া, আইরমারী খান পাড়া, চর আইরমারী, চর কামালের বার্ত্তী, মেরুরচর ইউনিয়নের বাঘাডুবি, ভাটি কলকিহারা ,আউল পাড়া , সেকেরচর, নিলাখিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ কুশল নগর ও সাজিমারা গ্রামে নদী ভাঙন চলমান রয়েছে। নদী ভাঙনে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসত ভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। শুধু বসতভিটায় নয় ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে।

প্রতি বছর বন্যা এলেই প্রকৃতির আজাব শুরু হয় নদী ভাঙা মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে বসত ভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবার গুলোর। নদী ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন। একারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিলাখিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামে নদী ভাঙনের খবর নিতে গেলে দেখা যায়, দশানী নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় একটি কাঠের বাগান কেটে ফেলছেন জমির মালিক জিয়াউর রহমান।

তিনি জানান, জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের গ্রামে ভাঙন রোধে দুইশত মিটার পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলেছে কিন্তু নদীর পানির তীব্র স্রোতে ও ভাঙনে ২০ মিটার পর্যন্ত স্থাপিত জিও ব্যাগ পানিতে ভেসে গেছে। পাশাপাশি দুইশত মিটারের বাইরেও নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামকে বাঁচাতে আরও দুইশত মিটার জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া ও আইরমারী খান পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের মত এবারও তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই দুটি গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবার দশানী নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

বাংগাল পাড়া গ্রামের কৃষক মিষ্টার আলী জানান, তাদের পরিবারের সবাই এখন নদী ভাঙনে নি:স্ব। এই পরিবারের কমপক্ষে ৬ জন বসতভিটা হারিয়ে ঢাকায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তিনি জানান, নদী ভাঙন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাপ দাদার ভিটা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। তাই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক জানান, তার ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই মানুষ বসত ভিটা ও ফসলি হারাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে গ্রাম গুলো বিলীন হতে পারে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙন রোধে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিরক্ষা কাজের জন্য সিসি ব্লকের একটি প্রকল্প সাবমিট করা হবে। আশাকরি প্রকল্পটি পাস হলে নদী ভাঙন রোধকল্পে স্থায়ী সমাধান হবে।

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ তহবিল চালু

বকশীগঞ্জে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ফসলি জমি

আপডেট সময় ০৮:৪৬:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু, বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি, বাংলারচিঠিডটকম: জামালপুরের বকশীগঞ্জে তিনটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদী। সেই নদ ও নদী বরাবরের মতই চিরচেনা রূপে ফিরেছে আবার। উপজেলার ১০টি গ্রামে নদ-নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব। সম্প্রতি বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া, আইরমারী খান পাড়া, চর আইরমারী, চর কামালের বার্ত্তী, মেরুরচর ইউনিয়নের বাঘাডুবি, ভাটি কলকিহারা ,আউল পাড়া , সেকেরচর, নিলাখিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ কুশল নগর ও সাজিমারা গ্রামে নদী ভাঙন চলমান রয়েছে। নদী ভাঙনে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসত ভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। শুধু বসতভিটায় নয় ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে।

প্রতি বছর বন্যা এলেই প্রকৃতির আজাব শুরু হয় নদী ভাঙা মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে বসত ভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবার গুলোর। নদী ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন। একারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিলাখিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামে নদী ভাঙনের খবর নিতে গেলে দেখা যায়, দশানী নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় একটি কাঠের বাগান কেটে ফেলছেন জমির মালিক জিয়াউর রহমান।

তিনি জানান, জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের গ্রামে ভাঙন রোধে দুইশত মিটার পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলেছে কিন্তু নদীর পানির তীব্র স্রোতে ও ভাঙনে ২০ মিটার পর্যন্ত স্থাপিত জিও ব্যাগ পানিতে ভেসে গেছে। পাশাপাশি দুইশত মিটারের বাইরেও নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামকে বাঁচাতে আরও দুইশত মিটার জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়া ও আইরমারী খান পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের মত এবারও তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই দুটি গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবার দশানী নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন।

বাংগাল পাড়া গ্রামের কৃষক মিষ্টার আলী জানান, তাদের পরিবারের সবাই এখন নদী ভাঙনে নি:স্ব। এই পরিবারের কমপক্ষে ৬ জন বসতভিটা হারিয়ে ঢাকায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তিনি জানান, নদী ভাঙন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাপ দাদার ভিটা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। তাই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক জানান, তার ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই মানুষ বসত ভিটা ও ফসলি হারাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে গ্রাম গুলো বিলীন হতে পারে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙন রোধে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিরক্ষা কাজের জন্য সিসি ব্লকের একটি প্রকল্প সাবমিট করা হবে। আশাকরি প্রকল্পটি পাস হলে নদী ভাঙন রোধকল্পে স্থায়ী সমাধান হবে।

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।