বিশ্বকাপে ফের নতুন ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে মুখোমুখি হচ্ছে হল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ হল্যান্ডের কমলা এবং আর্জেন্টিনার সাদা-আকাশী ডোরাকাটা জার্সির দিকে তকালেই মনে পড়ে যাবে বিশ্বকাপের অনেক অতীত স্মৃতি। সেই দুটি দলই আগামীকাল মুখোমুখি হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত একটায় লুসাইল স্টেডিয়ামে দুই দলের মাঠে গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রচিত হতে শুরু করবে নতুন ইতিহাস।

বিশ্বকাপে এই পর্যন্ত দুইবার শিরোপা জয় করেছে আর্জেন্টিনা। অপরদিকে নেদারল্যান্ড তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে পরাজিত হয়েছে।

আসন্ন ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণিয় দিক হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা স্ট্রাইকার লিওনেল মেসিকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করবেন আরেক সেরা ডিফেন্ডার লিভারপুলের ভার্জিল ফন ডিক। ম্যাচের আরেকটা মজার দিক হচ্ছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে কম বয়সি কোচের বিপক্ষে সবচেয়ে বয়স্ক কোচের দ্বৈরত। প্রথমবারের মতো বড় আসরে কোচের দায়িত্ব পালন করতে আসা ৪৪ বছর বয়সি আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি মুখোমুখি হবেন ৭১ বছর বয়সি ডাচ কোচ লুইস ফন গালের। যিনি বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখকে লিগ শিরোপা পাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আয়াক্সকে এনে দিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা।

প্রতিবারের মতো এবারো বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাতার এসেছে দক্ষিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। যারা এর আগে শিরোপা জয় করেছে ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে। অপরদিকে চার বছর আগে বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও এবার ডাচদের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি।

কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে অবশ্য বেশ সাবলীল ভাবেই নকআউট পর্বে উঠেছে ডাচরা। গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলয় পৌঁছানো দলটি যুক্তরাষ্ট্রকে খুব সহজেই হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। সমালোচকরা দুর্বল বললেও ক্রমেই কার্যকরি হয়ে উঠছে ডাচদের আক্রমণ। ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে মেমফিস ডিপের ফিটনেস। কোডি গাকপো এখন আক্রমনভাগে আতঙ্কের নাম।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। যেটি ছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আপসেট। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গ্রুপ সেরা হিসেবেই শেষ ষোল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। খোলস থেকে স্বরূপে ফেরা সাত বারের ব্যালন ডি অঁর খেতাব জয়ী লিওনেল মেসির দল নিজস্ব স্টাইলেই পার হয় অস্ট্রেলিয় বাধা। পৌঁছে যায় শেষ আটে।

মেসির সৃজনশীলতাকে হুমকি হিসেবেই দেখছেন ডাচ কোচ ফন গাল। তিনি বলেন, ‘মেসি সবচেয়ে বিপজ্জনক সৃজনশীল খেলোয়াড়। তিনি অনেক গোলের সৃষ্টি করতে পারেন আবার নিজেও গোল করতে পারেন। কিন্তু যখন তারা বল হাতছাড়া করবে, তখন তিনি কিছুই করতে পারেন না। আর এটিই হচ্ছে আমাদের সুযোগ।’

মজার ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বকাপ ও প্রীতি ম্যাচ মিলিয়ে দুই দলের বিগত নয় বারের মোকাবেলায় আর্জেন্টিনা কখনো নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে হারাতে পারেনি নেদারল্যান্ডকে। ২০১৪ সালে সাও পাওলোতে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের সেমিতে ডাচদের হারিয়েছিল টাইব্রেকারে। ওই সময়ও হল্যান্ডের কোচ ছিলেন ফন গাল, যার হৃদয়ে এখনো গেঁথে আছে পরাজয়ের ওই মুহূর্তটি।

ফন গাল বলেন, ওই ম্যাচে ডাচ খেলোয়াড়রা মেসিকে নিস্ক্রিয় করে ফেললেও টাইব্রেকারে হারিয়ে তাদের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ডাচ সমর্থকদের সবচেয়ে সেরা সুখস্মৃতি হচ্ছে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। ওই সময় শেষ মিনিটে গোল করে ডাচদের শেষ আটে পৌঁছে দিয়েছিলেন ডেনিস বার্গক্যাম্প। তারা শেষ মিনিটের দুর্দান্ত গোলে ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে ডাচরা।

শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর মধ্যে কখনো বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করতে না পারা দল হিসেবে সবার আগে রয়েছে নেদারল্যান্ড। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ সালে রানারআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ডাচদের। তন্মধ্যে আবার ১৯৭৮ সালের ফাইনালে তারা ৩-১ গোলে হেরেছিল স্বাগতিক আর্জেন্টিনার কাছে।

এদিকে আর্জেন্টিনাও জানে তাদের ফুটবলের অতীত ইতিহাস। তারা জানে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের সংগ্রামের কথা। তারা এখন এমন একটি দলের মোকাবেলা করতে যাচ্ছে যে দলটি এই আসরে এখনো কোন রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়নি। কোচ স্কালোনি বলেন, ‘এটি আগের ডাচ দলগুলোর মতো মেধাবী নয়। তবে তারা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই অবগত। ঐতিহাসিক দুই দলের মধ্যে দুর্দান্ত একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’