জামালপুর প্রেসক্লাবে প্রয়াত সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীরের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

প্রয়াত সাংবাদিক ও লেখক আমানুল্লাহ কবীরের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. জাহিদ হোসেন রবি। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলারচিঠিডটকম: দেশের প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুইবারের সাবেক সভাপতি জামালপুরের কৃতী সন্তান আমানুল্লাহ কবীরের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ১৬ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে ১৫ জানুয়ারি রাতে জামালপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রয়াত এই সাংবাদিকের জীবন ও কর্ম নিয়ে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক হাফিজ রায়হান সাদার সভাপতিত্বে সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. জাহিদ হোসেন রবি।

জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ ও বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের সাংবাদিক লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আলোচিত জামালপুরের নির্বাহী সম্পাদক কবি সাযযাদ আনসারী, বাংলাভিশনের সাংবাদিক জাহিদ হাবিব, প্রয়াত সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীরের বড় ছেলে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সংবাদ প্রযোজক সাংবাদিক শাত-ইল কবীর, সাংবাদিক জ্যোতিশ এষ, দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মোস্তফা মনজু, দৈনিক সচেতন কণ্ঠের সম্পাদক মো. বজলুর রহমান, বাসসের সাংবাদিক মো. মোখলেছুর রহমান লিখন, প্রতিদিনের সংবাদের সাংবাদিক মনজুরুল হক, সচেতন কণ্ঠের সাংবাদিক আয়নাল হক কালাচান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর একজন নির্মোহ, নিরহঙ্কারী এবং সহজসরলমনা মানুষ ছিলেন। সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে সবসময় নিরপেক্ষভাবে সংবাদ লেখা ও সংবাদ সম্পাদনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সাংবাদিকতার বিকাশ ও সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা ও জীবনমান উন্নয়নে সাংবাদিকদের বেতনভাতা বৃদ্ধি ও তাদের সবধরনের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সব সময় সাংবাদিকদের পাশে থেকেছেন তিনি। এই ধরনের ব্যক্তিত্বদের সম্মান করা ও মূল্যায়ন করা জরুরি। সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীরের লেখা বইগুলো জামালপুর প্রেসক্লাবে সংরক্ষণ ও তাকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ এবং নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে তার আদর্শ তুলে ধরার পরামর্শ দেন বক্তারা।

সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর ১৯৪৭ সালের ২৪ জানুয়ারি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ফুলকোচা ইউনিয়নের রেখিরপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাড়ে চার দশকের সাংবাদিকতা জীবনে আমানুল্লাহ কবীর ১৯৬৯ সালে বাংলা দৈনিক পয়গাম পত্রিকায় যুক্ত হয়ে সাংবাদিকতা পেশায় আসেন। আমানুল্লাহ কবীর ১৯৭০ সালে ডেইলি দি পিপলস পত্রিকায় সহ-সম্পাদক ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ টাইমস, দ্যা টেলিগ্রাফ, নিউনেশন, ডেইলি স্টার, ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় শীর্ষ ও দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক আমার দেশ। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় আন্দোলনের পাশাপাশি এরশাদ সরকারের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনেও পেশাজীবীদের মধ্যে নেতৃত্বের কাতারে ছিলেন তিনি।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা, বইপড়া ও লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেছিলেন তিনি। তার লেখা চারটি কবিতার বই, ভাষা আন্দোলন ও রাজনীতি নিয়ে চারটি বইসহ অন্তত ১০টি বই বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ৭২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান।