রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসারে গবেষণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক ❑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদেরকে রপ্তানি ও বাণিজ্যের প্রসারে পণ্যের বৈচিত্রকরণ ও নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গবেষণায় মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘পণ্যের গুণগত মান ধরে রেখে আপনারা (ব্যবসায়ীরা) যেন আপনাদের বাজার ঠিক রাখতে পারেন, আরো উন্নত করতে পারেন। সে দিকে আপনারা অবশ্যই দৃষ্টি দিবেন। অর্থাৎ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

শেখ হাসিনা ১ জানুয়ারি ২৬তম ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি ১ জানুয়ারি সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর পূর্বাচলে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গবেষণাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেই। আমার মনে হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের আরো গবেষণা দরকার। আমাদের পণ্যের চাহিদা এবং মান সেগেুলো বিশেষভাবে নিরুপন করা এবং রপ্তানীর ক্ষেত্রে পণ্যের মান ধরে রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প মালিক এবং উদ্যোক্তদের আমি অনুরোধ করবো আপনারা নিজের দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আপনাদেরকেই উদ্যেগ নিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে প্রযুক্তির যুগ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে আমরা কোনভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

করোনার মাঝেও অর্থনীতিকে সীমিত আকারে হলেও এগিয়ে নেয়ায় তিনি শিল্প উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে মালিক-শ্রমিক সকলকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, এর মাঝেও আমাদের অর্থনীতি কিন্তু একেবারে কখনো স্থবির হয়নি। স্বল্পমাত্রায় হলেও আমরা সব চালু রাখতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে পৃথিবীর বহু দেশ কিন্তু এই সমস্যায় পড়েছে। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে তাঁর সরকার প্রবৃদ্ধিকে ৮ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিল উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এটি অতিক্রমেরও আশবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান কূটনীতিকে বাণিজ্যিক কূটনীতি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ইতোমধ্যে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রত্যেকটি দূতাবাসকে সেভাবেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে আরো সহজভাবে করতে পারি সে জন্য দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩ দেশের বিষয়ে সম্ভাব্য সমীক্ষা সম্পন্ন করেছি। অর্থাৎ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের অর্জনকে ধরে রেখে যদি সামনে কোন চ্যালেজ্ঞ আসে সেটাও যেন আমরা মোকাবেলা করতে পারি সে বিষয়ে বিশেষ দৃ্িষ্ট দিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মনশি সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এ এইচ এম আহসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড এবং মেলা নিয়ে ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে রপ্তানি নীতি অনুযায়ী রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে ২০২২ ‘আইসিটি পণ্য ও সেবা’-কে ২০২২ সালের জাতীয়ভাবে ‘বর্ষ পণ্য’ ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বহিঃর্বিশ্বে রপ্তানি হওয়া আইসিটি পণ্য ও সেবাখাত হতে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। এ ছাড়া করোনাকালিনও সার্বিক রপ্তানি বৃদ্ধির কথা জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় রপ্তানি খাতের ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন, যা বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় মোট রপ্তানি আয় পেয়েছিলাম ১৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত ১৩ বছরে আমরা ৪৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। কাজেই এই ব্যাপক উন্নতি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মমর্যাদাশীল সোনার বাংলাদেশ গঠনে তাঁর সরকার সক্ষম হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় পূণর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সময় কিন্তু আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের, সে কথা মনে রাখতে হবে। আর সেই সুযোগটাও আমাদের নিতে হবে।

একুশ বছর পর ’৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর থেকেই বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ যেন শিল্প-বাণিজ্য এবং রপ্তানি ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে সে পদক্ষেপ তাঁর সরকার গ্রহণ করে এবং নিজস্ব বাজার সৃষ্টির উদ্যোগও নেয়। সারাদেশে ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে অঞ্চল ভিত্তিক শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে জনগণের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করে, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, নিজের দেশের বাজার সৃষ্টি করার পাশাপাশি নিজের দেশের মানুষকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করা, তাদের ক্ষয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, কেননা আমাদের দেশের শিল্পায়নের ব্যাপক প্রসার ঘটবে তখনি যখন আমাদের নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হবে।

অর্থাৎ বেসরকারি খাতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির ব্যাপক সুযোগ আওয়ামী লীগ সরকার তৈরি করে দেয়।

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদেরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার এবং রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় কৃষি পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপরও ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণের মাধ্যমে বাণিজ্য মেলার একটি স্থায়ী স্থান তাঁর সরকার করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী একে কাজে লাগানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানানোর পাশাপাশি ছোট খাট সমস্যাগুলো নিজেদের উদ্যোগেই সমাধান করে নেয়ার জন্য বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার শেষভাগে আশা প্রকাশ করে বলেন, মাসব্যাপী আয়োজিত এই মেলা উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রপ্তানিকারক, ক্রেতা ও দর্শকদের মাঝে আমাদের সক্ষমতার বার্তাটি আরও জোরালোভাবে পৌঁছে দিবে।

গত বছর কভিড-১৯ মহামারির কারণে মেলার আয়োজন করা সম্ভব না হলেও এবারই প্রথমবারের মতো স্থায়ী ভেন্যুতে পূর্বাচল নতুন শহরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’ (ডিআইটিএফ)-২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে সামনে রেখে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।সূত্র:বাসস।