করোনাক্রান্ত হয়ে ছেলের মৃত্যু : শেরপুরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে পিতার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তোলপাড়

আমিনুল ইসলাম বাদশার ছোট ছেলে আরজু

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

করোনা আক্রান্ত ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলা এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনেছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা। এ নিয়ে ২ আগস্ট রাত সাড়ে এগারোটায় তার পরিচালিত বাদশা চেয়ারম্যান ফেসবুক আইডি থেকে এ ঘটনার বিচার চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।

অন্যদিকে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থায় মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান তিনি।

যদি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পান তাহলে দেশের প্রচলিত আইনে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করার পর শুরু হয় তোলপাড়।

৩ আগস্ট সকালে এ খবর লেখার সময় পর্যন্ত ফেসবুক স্ট্যাটাসটিতে ছয় শতাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারি দুঃখ প্রকাশ করে রিয়েক্ট দিয়েছেন। প্রায় ৪০০ জন কমেন্ট করেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন ওই পেজটি শেয়ার করেছেন।

ওই স্ট্যাটাসে বাদশা অভিযোগ করে বলেন, ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকারি ডাক্তার রোববার (১ আগস্ট) কোনো টহলে যায়নি। এদিকে আমার সুস্থ ছেলে অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে থাকে এবং দিক বিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। এক পর্যায়ে হাসপাতালে অন্য একজন ডাক্তার সাধ্যমতো চেষ্টা করার পরও তার ছেলের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তির জন্য রিলিজ করা হয়। এ সময় করোনা ওয়ার্ড থেকে তার ছেলেকে ওই দিন দুপুরে নিচে নামিয়ে আনার পরে অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে তার মৃত্যু হয়। দায়িত্বে থাকা ডাক্তারের অবহেলা এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এবং ছেলের মৃত্যুর জন্য সকল প্রকার দায়, দায়িত্বে থাকা ওই ডাক্তারের উপরে বর্তায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ওই স্ট্যাটাসের বিষয়ে কমেন্ট অপশনে আলামিন শাহ নামে একজন এ ঘটনাটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

এমডি দুলাল মন্ডল নামে একজন লেখেন, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কসাই ডাক্তারকে আইনের আওতায় আনা হোক। খুব কষ্ট হয় বাবা মারা যাওয়ার পর লাশ ছেলে কাঁধে নেয়। আজ বাবা হয়ে ছেলের লাশ কাঁধে নিতে হলো কসাই ডাক্তারের কারণে।

৩ আগস্ট সকালে আমিনুল ইসলাম বাদশার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঝিনাইগাতী হাসপাতালে সকালে যে ডাক্তার দায়িত্বে থাকার কথা ছিল তিনি ওই সময় কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় ওই ডাক্তার শেরপুর শহরে অন্য এক রোগীর অপারেশন করছিলেন। আর এ দিকে সন্তান, আমার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেল। এমন দিন যেন কোন পিতা-মাতাকে দেখতে না হয় এ জন্য আমি ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

অন্যদিকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবুল কাশেম মোহাম্মদ আন্ওয়ারুর রউফ।

প্রসঙ্গত, আমিনুল ইসলাম বাদশার ছোট ছেলে আরজু (৩৪) গেল জুলাই মাসের ২৫ তারিখ করোনা শনাক্ত হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওই মাসের ২৮ তারিখ তাকে ঝিনাইগাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে তার মৃত্যু হয়। আরজু পেশায় একজন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ফারিয়া (২) নামে এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।