ভাত দেখলেই তার বমি বমি লাগে!

মা-বাবার সাথে মাহিদ হাসান লাভলু। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

ভাত দেখলেই তার বমি বমি লাগে! তাই জন্মের পর থেকে দীর্ঘ ২১ বছর শুধু সেদ্ধ ডাল, ছোলা, ডিম ও দুধ খেয়ে দিব্যি জীবন পার করছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার মাহিদ হাসান লাভলু নামে এক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বাউসা কবুতরমারী গ্রামে। সে ওই এলাকার আলম মিয়া ও লাল ভানু দম্পতির তিন ছেলে সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান। সে (লাভলু) বর্তমানে শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছে।

মাহিদ হাসান লাভলুর বাবা আলম মিয়া বলেন, ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন লাভলু। জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত তার ভাত খাওয়া না খাওয়ার বিষয়ে বুঝতে পারিনি। তবে ৬ মাস পরে যখন তার মুখে চালের তৈরি নরম খাবার ও ভাত দেওয়া হতো, সাথে সাথে সে বমি করে ফেলে দিত। যতবার তার মুখে চালের তৈরি খাবার ও ভাত দেওয়া হতো, ততবারই সে বমি করে দিত। এটাকে রোগ মনে করে তাকে অনেক চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। কিন্তু নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তার কোন রোগ সনাক্ত করতে পারেনি।

তিনি জানান, খাবার হিসাবে লাভলুর মুখে ভাত ছাড়া অন্য কোন কিছু দিলে সমস্যা হতো না। এর পরে প্রায় দুই বছর শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করে বড় হতে থাকে সে। মাঝে মধ্যে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করলেই সে বমি করে দিত। তাই তাকে আর ভাত খাওয়ানোর জন্য জোর করা হয়নি। বর্তমানে তার বয়স ২১ বছর হলেও একটি বারও ভাত খায়নি। ভাত ও চালের তৈরি খাবার ছাড়াই চলছে তার জীবন।

লাভলুর মা লাল ভানু বলেন, ২১ বছর ধরে লাভলু শুধু সেদ্ধ ডাল, ছোলা, ডিম ও দুধ খেয়ে জীবন ধারন করছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। লাভলুর খাবার ও অন্য সন্তানদের পড়ালেখার খরচসহ সংসারিক ব্যয় বহন করতে আমরা এক সময় অপারগ হয়ে পড়ি। এ সময় লাভলু নিজের পড়ালেখার খরচসহ নিজের অন্যান্য ব্যয় মেটাতে টিউশনি করতে শুরু করে। টিউশনির টাকায় এতোদিন তার সকল ব্যয় চালানোসহ সে সংসার চালাতেও সহায়তা করে আসছিল। কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে টিউশনি কমে যাওয়ায় আপাতত নিজের খরচ চালিয়ে যাচ্ছে লাভলু।

লাভলুদের প্রতিবেশী কাপড় ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান রাসেল বলেন, ভাতে-মাছে বাঙালি। ভাত বাঙালির প্রধান খাবার। বাঙালিরা যেখানে ভাত খেয়ে বেঁচে থাকে, সেখানে জন্মের পর থেকে ২১ বছর পার হলেও এ পর্যন্ত ভাত না খেয়েই দিব্যি জীবনযাপন করছে লাভলু।

লাভলু জানায়, সে নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং চন্দ্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে। বর্তমানে শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্স করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে লাভলু জানায়, ভাত দেখলেই তার খারাপ লাগে, বমি বমি ভাব শুরু হয়। তাই সহজলভ্য ছোলা আমার প্রধান খাবার হয়ে গেছে। ছোলা খেয়ে আমার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো আছে, কোনো সমস্যা হচ্ছেনা।