নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে উদ্বোধন হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ

ইসলামপুরের দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

লিয়াকত হোসাইন লায়ন, ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদের ১০ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন দ্বিতল অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ। সবার আগ্রহ কবে উদ্বোধন আর কখন নামাজের জন্য দ্বার উন্মোচন করা হবে। শেখ হাসিনা হেলথ্ টেকনোলজি ও ইসলামপুর পৌরসভার পাশে নান্দনিক এই মসজিদটির অবস্থান। সেই কাঙ্ক্ষিত সময় ১০ মে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপির সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন।

জননেত্রী শেখ হাসিনার সারাদেশকে নিয়ে ইসলামিক চিন্তাবোধে সারা দেশের ন্যায় ইসলামপুরে নান্দনিক এই মসজিদটি উদ্বোধন হচ্ছে।

প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক এই মডেল মসজিদে থাকছে এক সাথে ৮ হাজার মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিরা উৎসাহ প্রকাশ করে বলেন, এই রকম মসজিদ এখানে হবে এটা প্রথমে ভাবতেই পারিনি। তবে এত সুন্দর মসজিদ তৈরি হওয়ার পর বেশ ভালো লাগছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামি মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামি সাংস্কৃতি প্রসারের উদ্দ্যেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি আজ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম বর্তমান সরকার এক সঙ্গে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করছে।

তিনি জানান, ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ ইসলামি ফাউন্ডেশন আইনজারী করে মসজিদ ও ইসলামি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন্ দেখেছিলেন, তারি ধারাবাহিকতায় তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পূরণে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম গ্রহণ করে মুসলিম বিশ্বে এক অনন্য অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, নারী পুরুষদের জন্য পৃথক অজুর স্থান, নামাজ কক্ষ, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হেফজ খানা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র, পাঠাগার, শিশু শিক্ষা, মৃতদেহ গোছলের ব্যবস্থা, জানাযার ব্যবস্থা, অটিজম কর্ণার, ইকর্ণার বিদেশী পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধনকেন্দ্র, ইমামদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম মুয়াজ্জিন আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা, মসজিদের আন্ডারগ্রাউন্ডে রয়েছে বিশাল পার্কিং ব্যবস্থা।

সরকারের টেকসহ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শুদ্ধাচার কৌশল। আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক গঠনে এই মসজিদ ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ, গবেষণা, সভা, কর্মশালা, ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, সিমেথাজিয়াম আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে।

এখানে লাইব্রেরি গবেষণাসহ ইসলামি মূল্যবোধের চর্চা, প্রচার ও বিকাশের নানামুখি ব্যবস্থা রয়েছে। এর মাধ্যমে একটি দুর্নীতি-শোষণমুক্ত, ন্যায় ভিত্তির স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। সরকার উদ্যোগ ও অর্থায়নে একই সাথে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের এই মহতি উদ্যোগ জাতির ইতিহাসে শুধু নয়, মুসলিম উম্মার ইতিহাসেও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে সরকারি অর্থায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নারী প্রতি সহিংসতা রোধ, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি তৃণমূল পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের সঠিক প্রচার ও প্রসার, ধর্মীয় সভা সেমিনারের আয়োজন, হজ যাত্রীদের প্রশিক্ষণ, হামদ, নাত, কেরাত প্রতিযোগিতা তথা ইসলামিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, ইসলামিক রিচার্জ , ইমাম মুয়াজ্জিনদের ট্রেনিং, সামাজিক সমস্যা -বাল্য বিবাহ, যৌতুক ও মাদক সহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা সমাধানে আলেম উলামাদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এ মডেল ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে। এদেশের সর্বস্তরের আলেম ওলামার কর্মস্থান সৃষ্টিতে ও বিশাল ভূমিকা পালন করবে।

নির্মাণাধীন ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এসব কমপ্লেক্স বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, মুসলিম বিশ্বের কোন দেশের মুসলিম শাসক বা সরকার প্রধান একসাথে ৫৬০টি মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এ উদ্যোগ মূলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদুর প্রসারী ও দূরদর্শী চিন্তাধারার ফসল।

এটি উন্নত, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ সমাজ গঠন তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ একটি উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

তিনি এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট সকল শহিদ, জাতীয় চারনেতা, যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, স্বজনহারা পরিবার ও ১৯৭১ সালে নির্যাতিত মা বোনদের স্মরণ করেন এবং আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।