‘এই বেয়াদব তুই এহেনে কি করস রে’

নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক।

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

মিটিং শেষ করে মেয়র আবু বক্কর তার কর্মীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে হেঁটে বের হচ্ছিলেন। এ সময় নিচে আমার ছেলে সাব্বির দাঁড়ানো ছিলো। মেয়রকে দেখে সাব্বির সালাম দেয়। সালামের জবাব না নিয়ে মেয়র তাকে ধমক দিয়ে বলেন ‘এই বেয়াদব তুই এহেনে কি করস রে’। এটা বলে উনি যাওয়ার পরই তার (মেয়রের) অনুসারীরা সাব্বিরকে মারধর শুরু করে। পরে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান লেবু সাব এসে আমার ছেলেকে ফিরাইছেন, তখন মেয়রও ওই জায়গায় এসে তার কর্মীদের নিয়ে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, লেবু সাব আমার ছেলেকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী হাসপাতালে পাঠায়। পরে আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা ময়মনসিংহে আমার ছেলেকে রেফার্ড করে। এখন আমার ছেলে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি আছে। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার চাই।

কথাগুলো বলছিলেন, শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের উপ-মানব সম্পদ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বাদশার বাবা আব্দুল মতিন।

এ ঘটনায় সাব্বিরের বাবা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে দশ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনকে আসামি করে নালিতাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন।

ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির

অভিযোগ উঠেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকের প্ররোচনায় তার কর্মী সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালায় ওই ছাত্রলীগ নেতার ওপর। গেল বুধবার বিকালে নালিতাবাড়ী ইউএনও কার্যালয়ে একটি মিটিং শেষে ফেরার পথে মেয়রের কর্মীরা তাকে মারধর করে বলে জানান সাব্বিরের বাবা। এই ঘটনার একটি সিসি টিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ বিভাগকে জানিয়েছেন ইউএনও।

অন্যদিকে আজ শুক্রবার সকালে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল জানান, এ ঘটনায় হামলার শিকার সাব্বিরের বাবা একটি মামলা দায়ের করেছেন। এখন আসামিদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

সিসি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে বের হওয়ার সময় মেয়র আবু বক্করকে সালাম দেন ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির। সালাম দেওয়ার পরপরই মেয়রের পেছনে থাকা তার কর্মীরা সাব্বিরের উপর হঠাৎ চড়াও হয়ে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারতে থাকে। পরে মেয়র ঘটনাস্থলে এসে তার কর্মীদের ফিরিয়ে নিয়ে যান।

ফুটেজে আরও দেখা যায়, ওই দিন হামলাকারিদের কাছ থেকে সাব্বিরকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকসেদুর রহমান লেবু।

ঘটনার পর জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। এছাড়া যে যেখান থেকে পারেন নালিতাবাড়ীর মেয়র মহোদয়কে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সালামটা জানিয়ে দিবেন এমন বক্তব্য লিখে সালাম দেওয়ার ভঙ্গিমায় বেশ কিছু ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহমেদ শাকিল বলেন, মেয়রের সামনে জেলা ছাত্রলীগের একজন পোষ্টেড নেতাকে মারধরের ঘটনা লজ্জাজনক। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মেয়রের সাথে থাকা ছেলেগুলোই সাব্বিরের ওপর হামলা করেছে।

এ বিষয়টি খুবই খারাপ কাজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকসেদুর রহমান লেবু।

নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক দাবি করেন, তিনি বা তার কর্মী সমর্থকরা এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না। স্থানীয়ভাবে রাজনীতিতে তাকে হেয় করার জন্য এই ধরণের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তিনি নিজেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান।

এদিকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ বিভাগকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন নালিতাবাড়ীর ইউএনও হেলেনা পারভীন।