শেরপুর হাসপাতাল : প্রেম করতে না চাওয়ায় ইন্টার্ন শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত

উত্যক্তকারী আরাফাত

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

প্রেম করতে না চাওয়ায় শেরপুরে জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত পপি নামে এক নারী ইন্টার্ন মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করে আসছিল আরাফাত নামে এক যুবক। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ২১ এপ্রিল সকালে ওই নারীর সহপাঠীকে বেদম মারধর করে অভিযুক্ত আরাফাত ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। পরে এর প্রতিকার চেয়ে দুপুরে হাসপাতালের সামনের রাস্তা ঘন্টাব্যাপী অবরোধ করে রাখে শতাধিক বিক্ষুব্ধ ইন্টার্ন মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট শিক্ষার্থীরা। ফলে সড়কের দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অন্যদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উত্যক্তকারীকে আটক করে পুলিশ।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সাইক মেডিকেল ইনস্টিটিউটের ম্যাটসের শিক্ষার্থী পপি আক্তার বেশ কিছু দিন যাবত জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্নশীপ করছিলেন। শহরের নারায়ণপুর এলাকার আরাফাত নামে এক যুবক পপিকে দীর্ঘদিন যাবত প্রেম নিবেদনের মাধ্যমে উত্যক্ত করে আসছিল। এর প্রতিবাদ করায় ২১ এপ্রিল দুপুরে পপির বন্ধু নাজমুল ইবনে হাফিজকে পিটিয়ে আহত করে আরাফাত, হালিম ও রনিসহ বেশ কয়েকজন। এ সময় নাজমুলকে হুমকি দেওয়া হয় এ কাজে তাদের বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে খুন করা হবে। পরে পপির সহপাঠীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে জেলা সদর হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযান চালিয়ে উত্যক্তকারী আরাফাতকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পপি বলেন, আরাফাত ফোন দিয়ে থ্রেড করতো। তার (আরাফাত) সাথে কথা বলতে হবে, প্রেম করতে হবে। প্রতি উত্তরে আমি বলেছি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। সে বলতো বিয়ে হয়ে গেছে তো কি হয়েছে। জামাইতো আর তোর সাথে থাকে না। আমার সাথে এখন প্রেম কর। সে হুমকি দিয়ে বলতো আমার সাথে সখ্যতা না রাখলে শেরপুর থাকতে পারবিনা। তোর বাড়ি কুষ্টিয়াতে চলে যা। এ পর্যায়ে তার বিষয়ে কর্ণপাত না করায় সে হাসপাতালে উপস্থিত হয়। আমি যখন ডিউটিতে থাকি তখন আমার গায়ে হাত দিতে চায়, মারতে চায়। আমার অন্য সহপাঠীরা সাথে থাকার ফলে আমাকে মারতে পারেনা। এ সময় আমাকে বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করে। আর রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমার সাথে সাথে থাকে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ও দেখি সে সড়কে দাঁড়িয়ে আছে। এসব কারণে আমি একেবারেই সেইফ না।

আহত শিক্ষার্থী নাজমুল ইবনে হাফিজ বলেন, আরাফাত পপিকে ডিস্ট্রাব করতো। এক সময় সে আমার কাছে পপির মোবাইল নাম্বার চায়। আর তা না দিলে পপিকে হাসপাতালে দেখা যাবেনা বলে হুমকি দেয়। এই কারণে আমি তাকে মোবাইল নাম্বার দেই। এরপর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে আরাফাত। পপিকে উত্যক্ত করার পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকে। পরে বিষয়টি সিভিল সার্জন স্যারকে জানালে তিনি পুলিশ বিভাগকে অবহিত করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হাসপাতালেও আসেন। কিন্তু ওই দিন আরাফাতরা ছিল না। পুলিশ আসার খবর আরাফাত জানার পর সে হুমকি দিয়ে বলে, পুলিশ কি করবে, ওরা তোদের কত দিন দেখে রাখবে। যদি আমাদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তো দুদিন পর বের হয়ে এসে তোকে খুন করে ফেলবো। তার এই বক্তব্য মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ড করে রাখার কারণে আজ আমাকে ওরা মারধর করে।

মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট শিক্ষার্থী নাজমুল ইবনে হাফিজ বখাটেদের আক্রমণে আহত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. খাইরুল কবীর সুমন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত আরাফাতকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।