বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাটে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের নৌ যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ

বালুরচর ভেঙ্গে পায়ে হেঁটে পার হচ্ছে বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাটের নৌযাত্রীরা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

বিল্লাল হোসেন মন্ডল, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীর তিনটি চ্যানেলের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাহাদুরাবাদঘাট ও গাইবান্ধা বালাসীঘাটের মধ্যে নৌ চলাচলকারী শতশত যাত্রী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। মাইলের পর মাইল জেগে উঠেছে চর আর চর। ১০টি নৌঘাটের সঙ্গে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

দেওয়ানগঞ্জ পানি বিজ্ঞান শাখা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে বন্যার সময়ে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনায় প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ পানির প্রবাহ ছিল ৬২ হাজার ১৬৪ দশমিক ৩৭ ঘন মিটার। একই সময় পানির প্রবাহ সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ২০ দশমিক ৭৯ মিটার। ওই সময় উজান থেকে নেমে আসা বালু যমুনা বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনায় প্রায় ৭ লাখ ২২ হাজার ৭১৮ দশমিক ৬০ মেট্রিকটন বালু প্রবাহিত হয়। তিন মাস পর শুকনা মৌসুম শুরু হলে জানুয়ারি প্রথমেই পানির প্রবাহ রয়েছে ১৬ দশমিক ১১৫ মিটার।

দেওয়ানগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসান হাবিব জানান, যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হয়। যে স্থান থেকে বালু তোলা প্রয়োজন সে স্থান থেকে বালু না তুলে যেখান সেখান থেকে বালু তোলায় যমুনায় গুরুত্বপূর্ণ ৩টি চ্যানেলের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। গাইবান্ধা এলাকার কালাসোনা চ্যানেল, বিগ পাগলা চ্যানেল এবং দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ চ্যানেলের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। আসাম খাড়ি চ্যানেল মুখ খনন করায় এই চ্যানেলটি চালু রয়েছে। এবছর জানুয়ারি প্রথমেই মাসের মধ্যেই যমুনার পানি সর্বনিম্ন পর্যায়ে। মাইলের পর মাইল জুড়ে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুরচর। জরুরিভাবে চ্যানেলগুলোর মুখ ড্রেজিং করার জন্য দাবি করছেন এলাকাবাসী।

বালুরচর ভেঙ্গে পায়ে হেঁটে পার হচ্ছে বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাটের নৌযাত্রীরা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান সেলিম খান জানান, ড্রেজিং করার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হচ্ছে, ১৩-১৪ ফুট ড্রেজিং করার কথা থাকলেও মাত্র ১-২ ফুট নদী ড্রেজিং করে ১৩-১৪ ফুটের বিল তুলে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রভাবশালী ঠিকাদার। এককালে প্রাণচাঞ্চল্য ভরা নৌঘাটগুলোর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। ইতিমধ্যেই ফুটানি বাজারঘাট থেকে চলাচলকারি ফুলছড়ি রতনপুর ফজলুপুর জিগাবাড়ী চর আমখাওয়া সানন্দবাড়ী মোল্লারচর বেলগাছা চিনাডুলি গুঠাইল শিংরাবাজার হাজির হাট নৌঘাট পানি শূন্যতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ফুটানী বাজার বালাসি শতশত নৌযাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে চর পেরিয়ে নৌকায় চলাচল করছে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ জামালপুরের সঙ্গে উত্তর বঙ্গের ১৩টি জেলার সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ব্রিটিশ রেলওয়ে ১৮৩৮ সালে দেওয়ানগঞ্জ বাহাদুরাবাদ ও গাইবান্ধার তিস্তামুখ ঘাটের মধ্যে যাত্রীবাহী স্টিমার ও মালবাহী ওয়াগন ফেরি সার্ভিস চালু করেছিল। ২০০১ সালে পানি কম থাকা ও চর জাগায় যাত্রী পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র ওয়াগন পারাপার করছিল। সেটিও ২০১৪ সালে একই কারণে কর্তৃপক্ষ চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে ময়মনসিংহ বিভাগের ছয় জেলার সঙ্গে উত্তর বঙ্গের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। জেগে ওঠা চরের কারণে শ্যালোচালিত নৌকাগুলো ঘুরে ঘুরে চলাচল করছে। এতে গন্তব্যে পৌছাতে বেশি সময় লাগছে। গাইবান্ধা থেকে আসা নৌযাত্রীরা দেওয়ানগঞ্জে এসে সময়মত ট্রেন ধরতে না পেরে চরম দুর্ভোগে পড়ছে।

৩০ ডিসেম্বর সরেজমিনে যমুনার চ্যানেল ঘুরে দেখা যায়, গাইবান্ধার বালাসীঘাট থেকে শতাধিক নারী-পুরুষ শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়েসের যাত্রীরা শ্যালোচালিত নৌকায় ফুলছড়ির ফুলকোচা যমুনায় পৌছে। এখানে পানি কম থাকায় নৌকা আটকে গেছে। যমুনার পানিতে বাধ্য হয়ে পানিতে নেমে ভিজে বালুর চর হেঁটে পাড় হয়ে পুনরায় পানি ভেঙ্গে নৌকায় উঠে ফুটানি বাজারঘাটে পৌছায়। কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার মধ্যে এককিলোমিটার নদীর চরে হেঁটে ঘাটের সড়কে উঠতে হয়। এসময় নৌযাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে।

ভুক্তভোগী নৌযাত্রী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হাসান ও চুকাইবাড়ী ইউপি সদস্য তমছের আলী জানান, গাইবান্ধা ফুলকোচায় পানি নেই, ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে নৌকা পার করে এপাড়ে একমাইল হেঁটে পাড়ে উঠতে হয়।

২ জানুয়ারি সকালে সরেজমিনে গিয়েও দেখা গেছে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ। এ সময় যাত্রী জাহাঙ্গীর জানান, বালাসীঘাট থেকে বাহাদুরাবাদঘাট আসতে টিনেরচর মাথা, হলকারচর, হাবরাবাড়ী, খাটিয়ামারী ১৪, কোচখালী, বালাসীর মুখ বন্ধ হয়ে থাকায় নৌকা ঠেলে ধেক্কে আসতে হয়েছে।

মাঝি আব্দুল আজিজ জানান, দুর্ভোগের কারণে যাত্রীর যাতায়াত কমে গেছে। ১ জানুয়ারি চারজন যাত্রী নিয়ে বাহাদুরাবাদঘাটে আসতে হয়েছে তার। বর্তমান তাদের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্তের দিকে।