শেরপুরে বিপদসীমার নিচে নেমেছে দুই নদীর পানি, দেখা দিয়েছে গো খাদ্য সংকট

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

শেরপুরে বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে দুটি নদীর পানি। এর আগে অতি বর্ষণে টানা দুইদিন সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ও নালিতাবাড়ীর চেল্লাাখালি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২২ জুলাই সকালে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জিয়াসমিন খাতুন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ও চেল্লাাখালি নদীর পানিও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন শেরপুর-১ (সদর) আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক ও জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব।

উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় বন্যার পানি বাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া জেলার শ্রীবরদী উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম, নালিতাবাড়ীর ৪টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নকলার ৫টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করে। এ অবস্থায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এছাড়া এখনও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে প্রায় লাখো মানুষ। আর এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে এক নারীসহ তিনজন মারা গেছেন। আর শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ারদোকান ও শিমুলতলীর দুটি কজওয়েতে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গত এ সপ্তাহ যাবত শেরপুরের সাথে উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এখন বন্যা দুর্গত এলাকায় গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী গ্রামের হান্নান শেখ বলেন, এসব এলাকার প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা ডুবে গেছে। এছাড়া চলতি রোপা-আমনের সব বীজতলা এখন পানির নিচে। গত এক সপ্তাহে পানি না কমায় পাট আর শাক সবজির ক্ষেত পচতে শুরু করেছে। এদিকে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি।

ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল হক বলেন, বন্যায় ফসল আবাদ সব নষ্ট করে ফেলেছে। এখন খাবার মত ঘরে চাল পর্যন্ত নাই।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, বন্যায় হাঁস, মুরগি ও পোল্ট্রি খামার ভেসে গেছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে যেন গরুর শরীরে রোগ ব্যাধি দেখা না দেয় সে জন্য ভ্যাটেনারি সার্জনরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছেন। পাশাপাশি পশু পাখির খমারিদের সেবা দিতে কন্ট্রোাল রুম খোলার প্রক্রিয়া চলমান আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বন্যায় ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত পাঠানো হচ্ছে। এখন তারা গরুর খাদ্য সংকট মেটাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জন চিকিৎসক অনোয়ারুর রউফ বলেন, বন্যায় পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দিতে ইতোমধ্যে ২০টি মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল ও এন্টিবায়োটিকসহ নানা ধরণের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, বন্যায় সদর উপজেলা এবং নালিতাবাড়ীর কৃষকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতির শিকার হয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত রোপা-আমনের ৪৩০ হেক্টর, সবজির ১২৬ হেক্টর, আউশ ধানের ১৫৭ হেক্টর ও পাট ৬২ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে পানি নেমে গেলে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করতে ৫০ একর জমিতে রোপা-আমন বীজতলা তৈরি করা হবে। সেখান থেকে কৃষকদের চারা সরবরাহ করা হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্যার্তদের জন্য ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।