বাংলারচিঠিতে সংবাদ পড়ে বঙ্গবন্ধুর শেরপুর সফরের তথ্য জেলা তথ্য বাতায়নে যুক্ত করার দাবি বিশিষ্টজনদের

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ২৮ মে শেরপুর সফর করেছিলেন। এই ঐতিহাসিক তথ্যটি এত দিন শেরপুরবাসীর কাছে অজানাই ছিল। বঙ্গবন্ধুর শেরপুর সফর নিয়ে গেল ২৮ মে বাংলারচিঠি ডটকম- এ সংবাদ প্রচার হয়। খবরটি জেলার মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, সমাজসেবকসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। এর প্রেক্ষিতে তারা বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটের ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর অংশে ওই তথ্যটি যুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছেন। অন্যদিকে এ ধরনের একটি তথ্য বাংলারচিঠি ডটকম – এ প্রচার হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেছেন, বিষয়টি তথ্য বাতায়নে যুক্ত করা হবে। এ জন্য আরও তথ্য উপাত্ত পেতে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে উপ-কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেরপুর সফর করেছিলেন এই তথ্যটি জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত হওয়া উচিৎ মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড শেরপুর শাখার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি আইনজীবী ফকির আখতারুজ্জামান ৩১ মে সকালে বলেন, এই ঐতিহাসিক তথ্যটি এত দিন শেরপুরবাসীর কাছে অজানাই ছিল। এ বিষয়টি জেলার তথ্য বাতায়ন অংশে যুক্ত হলে ওয়েবসাইটটি আরও সমৃদ্ধ হবে। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যারা লালন করেন তাদের জ্ঞান ভান্ডার বাড়বে বলে তিনি জানান।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার নূরুল ইসলাম হিরু বলেন, শেরপুরে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন এটি আমি জানতাম না। এ বিষয়ে তথ্য জানতে বেশ আগে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেন এমন অনেকের সাথে আলোচনাও করেছি। কিন্তু কেউ এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেনি। গেল ২৮ মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর জাতির পিতার শেরপুর সফরের বিষয়ে তথ্য বহুল ধারণা পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট তথ্য বাতায়নে এ তথ্যটি সংরক্ষণ করা হলে নতুন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে যারা কাজ করবে তাদের জন্য সুবিধা হবে। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফখরুল মজিদ খোকন বলেন, জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে যারা জ্যেষ্ঠ ছিলেন তাদের কাছ থেকেও এ বিষয়ে জানতে পারিনি। এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর পুরো বিষয়টি অবগত হই। পাশাপাশি আমার পরিবারের সকল সদস্য এ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে। এটা আমাদের জন্য বিরাট তথ্য। এটি জেলার ঐতিহ্য এবং গর্বের বিষয়।

এই তথ্যটি জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও বিষদভাবে জানতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। তাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক এবং সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পালের সাথে আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান।

সমাজ সেবক ও মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম জাদুঘরের শেরপুর সদর উপজেলার আহ্বায়ক রাজিয়া সামাদ ডালিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ২৮ মে শেরপুর সফর করেছিলেন এ সম্পর্কে তিনি জানেন। এবং এ বিষয়টি অনেক আনন্দের। এমন তথ্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংরক্ষণ করা জরুরী বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, তার পিতা খান বাহাদুর ফজলুর রহমান মুসলিম লীগ নেতা ছিলেন এবং পাকিস্থান সরকারের কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডিং (সি অ্যান্ড বি) মন্ত্রী ছিলেন। এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে ফজলুর রহমানের সুসম্পর্ক ছিল। ওই সময়ে বঙ্গবন্ধু তার পিতার কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তার ধারণা এ সভার বিষয়েই চিঠি লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক শেরপুর সফর করেছিলেন এ বিষয়টি জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত হলে নতুন প্রজন্ম এর মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারবে বলে মনে করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল।

ছাত্রলীগের জেলা সম্পাদক রেজাউল বলেন, বঙ্গবন্ধুর শেরপুর সফর সম্পর্কিত বিষয়টি জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত করার অনুরোধ জানাতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তিনি নিজে এবং সভাপতিকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করবেন। এছাড়া এ দিনটি যথাযতভাবে পালন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় সে বিষয়েও অনুরোধ জানানো হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, এখন থেকে ২৮ মে বঙ্গবন্ধুর শেরপুর সফর উপলক্ষে দিনটি জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অন্য রকমভাবে পালন করা হবে।

বর্তমান জেলা প্রশাসক শেরপুরে যোগদানের পরপরই ডিসি অফিসে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করেন। যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আর এ বিষয়টিও তিনি আন্তরিকভাবে দেখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব বলেন, বঙ্গবন্ধুর শেরপুর সফর সম্পর্কিত কিছু তথ্য আমি জানি। আর এ বিষয়টি তথ্য বাতায়নে যুক্ত করা যেতেই পারে। আমরা দেখবো সেই সময়ের তথ্য উপাত্ত। যদি ওই সময়ের কোন পেপার কাটিং বা অন্য কোন ডকুমেন্ট পাওয়া যায় তাহলে সেসব তথ্যসহ ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।

জেলা প্রশাসক জানান, খুব অল্প সময়ের ভিতর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এজন্য তথ্য যাচাই বাছাই করতে সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে উপ-কমিটি গঠন করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালের ২৮ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শেরপুর সফর করেছিলেন। এদিন শহরের প্রগতিশীল মুসলিম লীগের আয়োজনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় জি কে (গোবিন্দ কুমার) স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আলতাফউদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান, পূর্ব বাংলার সংসদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হামিদ খান, জহিরউদ্দিন আহমেদ, ফখরুদ্দীন আহমেদ, শামসুল হক প্রমুখ। আর সভাটির আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন খন্দকার আব্দুল হামিদ এবং অন্যরা।

এস হাসিনা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর গোয়েন্দা শাখার গোপন নথি, প্রথম খন্ড ১৯৪৮-১৯৫০, হক্কানি পাবলিশারস ২০১৮। এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ওয়েব সাইট সংগ্রামের নোটবুক গোয়েন্দা নথিতে বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮-১৯৪৯, পাকিস্তানী গোয়েন্দা নথিতে বঙ্গবন্ধু (১৯৪৮) শেরপুরে শেখ মুজিব অংশ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

উপরোক্ত নথিগুলো সূত্রে জানা যায়, ওই সভায় আলোচকরা ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমিদারী প্রথার বিলোপ, বিনা বেতনে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, পূর্ব বাংলায় কমিশনার পদের বিলুপ্তি, শেরপুর-জামালপুর ডি.বি রোড পুনর্গঠন এবং সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য প্রদেয় অর্থ কমানোর দাবি তোলা হয়।

এছাড়া তৎকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়। এবং হিন্দুরা যেন নিজেদের ভিটেমাটি ও বাড়ি ছেড়ে না যায় সে জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সভায় হিন্দু এবং মুসলমান মিলে ৬০০ জন মানুষ উপস্থিত ছিল।