বকশীগঞ্জের সারমারা গ্রাম করোনার হটস্পটের পথে, জেলায় নতুন আক্রান্ত ২৮   

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের সারমারা গ্রাম করোনার হটস্পটে পরিণত হতে চলেছে। এর আগে করোনায় আক্রান্ত এক দম্পতির সংস্পর্শে আসায় ৩০ মে ওই গ্রামে একই পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশীসহ নয়জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। ওই দম্পতিসহ ওই গ্রামে এ পর্যন্ত ১১ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলো। বকশীগঞ্জের নতুন ওই নয়জনসহ ৩০ মে সারা জেলায় আরও ২৮ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ২৩৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। জেলার সিভিল সার্জন চিকিৎসক প্রণয় কান্তি দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩০ মে রাতে ময়মনসিংহের পিসিআর ল্যাব থেকে দু’দফায় আসা ১৬৯টি নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে ২৮ ব্যক্তির করোনা পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ১০ জন, বকশীগঞ্জে নয়জন, মেলান্দহ উপজেলায় দু’জন এবং ইসলামপুর উপজেলায় সাতজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আগে করোনায় আক্রান্ত এক দম্পতির সংস্পর্শে আসায় একই গ্রামের দুই বাড়ির নয়জন স্বজন ও প্রতিবেশী, আগে আক্রান্ত এক শিশুর দাদা-দাদি ও ফুপু, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী-পুত্র এবং মুন্সিগঞ্জে ধানকাটা শেষে বাড়িতে আসার পর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টিনে থাকা নয়জন ধানকাটা শ্রমিক রয়েছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের সারমারা গ্রামে গত ১৯ মে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়া এক দম্পতির সংস্পর্শে আসায় দুটি বাড়ির আরও নয়জন এক সাথে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একই পরিবারের এক নারী (৪৫), তার ছেলে (১৬) ও মেয়ে (১৫), আরেক পরিবারের ভাই (১৫) এবং বোন (১০), আরেক নারী (৪৫) ও তার মেয়ে (১২), অন্য দু’জন নারী যাদের বয়স ৪৫ ও ২০ বছর। প্রথম আক্রান্ত ওই দম্পতি জামালপুরে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাড়ির স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে একই দিনে নয়জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে সারামারা গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনাভীতি দেখা দিয়েছে। বকশীগঞ্জ হাসপাতালের ইউএইচএফপিও চিকিৎসক প্রতাপ কুমার নন্দী স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাতে ওই গ্রামে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউনসহ আশপাশের বাড়িগুলোর লোকজনদের করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কঠোর নির্দেশ জারি করেছেন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক ব্যক্তি (৪০) ব্যতীত বাকি নয়জনের সবাই ধানকাটা শ্রমিক। তাদের বাড়ি উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের শাহজাদপুর গ্রামে এবং তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ধানকাটার কাজ শেষে তারা কয়েকদিন আগে মুন্সিগঞ্জ থেকে বাড়িতে এলে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ তাদেরকে স্থানীয় শাহজাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোয়ারেন্টিনে রাখেন। পরে করোনা পরীক্ষার জন্য তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হলে ৩০ মে প্রত্যেকের করোনা পজিটিভ আসে।

ইসলামপুর উপজেলায় আক্রান্ত সাতজনের মধ্যে পৌরসভার কিংজাল্লা গ্রামের একই পরিবারের আগে আক্রান্ত এক শিশুর দাদা (৭৫), দাদি (৬৫) ও ফুফু (২৫), একই গ্রামের ঢাকা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র (২৩), সিরাজাবাদ গ্রামে ঢাকা থেকে আসা এক নারী পোশাককর্মী (২৫) ও ওষুধ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী (৩২) এবং গাঁওকুড়া গ্রামের এক নারী (২৩) রয়েছেন।

মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাসহাটিয়া গ্রামে ঢাকা থেকে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২১ মে মারা যাওয়া পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তির পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশী নয়জনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ওই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী (৫০) ও তার ছেলের (২৭) করোনা পজিটিভ আসে।

জামালপুরের সিভিল সার্জন চিকিৎসক প্রণয় কান্তি দাস এ প্রতিবেদককে জানান, ৩০ মে জেলার চারটি উপজেলায় নতুন শনাক্ত হওয়া ২৮ ব্যক্তির কয়েকজনকে নিজনিজ বাড়িতে এবং বাকিদের জামালপুর সদরে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িঘর লকডাউনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।