এবার স্বপরিবারে করোনা পজেটিভ হয়ে যা বললেন সেই পুলিশ সুপার

সুজন সেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর
বাংলারচিঠিডটকম

এবার স্বপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানালেন পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম। ৮ মে রাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি ওই তথ্য নিশ্চিত করেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন পরিবারের প্রত্যেকেই এখন করোনা পজেটিভ। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন তার স্ত্রী, মা, ভাগনে, বোনসহ প্রায় সাতজন। মেহেদুল করিম শেরপুরের সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে রংপুর রেঞ্জের রিজার্ভ ফোর্সের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে আছেন।

৬ মে তিনি করোনা শনাক্ত হওয়ায় পর প্রথম ভিডিও বার্তায় বলেন, আমি আনসেভ থেকেছি বা আমাকে আনসেভ থাকতে হয়েছে, দেশের মানুষের জন্য, ফোর্সের জন্য। করোনা পজেটিভ হওয়ায় তিনি মোটেও আশ্চর্য হননি বলে উল্লেখ করেন।

৯ মে দুপুরে চার চ্যারিটি ফর চাঞ্জ পেজটি বিচরণের সময় সেখানে আপলোড হওয়া মেহেদুল করিমের নয় মিনিট এক সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে তার স্ত্রী শীলা বক্তব্য রাখেন, করোনা পজেটিভ হওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমি একদমই ঘাবরাচ্ছিনা। আমাদের পাশে যিনি আছেন (মেহেদুল করিম), তিনি এখন করোনার স্টেমিনা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার ভিডিও দেখে পরিবারের সবাই এখন স্ট্রং হয়ে গেছেন।

এ সময় মেহেদুল করিম বলেন, আমরা করোনা পজেটিভ হলেও প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের দূরত্বটা বজায় রাখছি। ভাইরাস লোড কমানোর জন্য এ ব্যবস্থা।

বাড়িতে বসে যারা করোনা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কারো শ্বাস-প্রস্বাসে সমস্যা হয়। তাহলে একটি ব্রেডিং মেশিন ব্যবহার করতে পারেন। যা তিনি নিজেও ব্যবহার করছেন। ওই মেশিনটি স্বচল করে সেখানে ইনডেক্স ফিঙ্গার ঢুকিয়ে মাপা যাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। মেশিনটির মাধ্যমে ধারণা নেয়া যাবে কখন একজন করোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে তিনি ফেনাডিন, সি-ভিট, জিম্যাক্স, এন্টি অক্সিডেন্ড ট্যাবলেট রেক্স, জিঙ্ক-বি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ খাচ্ছেন বলে জানান। এছাড়া তাজা ফলমূলের মধ্যে মালটা, আনারস ও কাঁচা আম খাচ্ছেন।

করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তার মা কান্নাকাটি করেছেন উল্লেখ করে মেহেদুল করিম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তাকে বোঝানোর পর তিনি শান্ত হন।

এই পুলিশ সুপার জানান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীরে জ্বর ও ব্যাথার অনুভূতিসহ গলায় সামান্য একটু সমস্যা হয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রীর শরীরে সহনীয় মাত্রায় জ্বর রয়েছে। আর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের গলায় একটা কিছু অনুভূত হলেও এখন পর্যন্ত অন্য কোন উপসর্গ দেখা যায়নি।

তারা বিশ্বের একমাত্র করোনা কাপোল জানিয়ে মেহেদুল বলেন, আমরা করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তা প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকা নিয়ে ও তা ভিডিও করে আলোচনার মাধ্যমে সবার মনে সাহস যোগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এর আগে যেসব কাপোল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা করোনা জয় করে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। কিন্তু আমরা করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করছি।

এ সময় তিনি, করোনা আক্রান্ত দেশ ও বিদেশে অবস্থানকারি বাংলাভাষীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যে যেখানেই অবস্থান করুননা কেন। করোনাকে ভয় পেলে চলবে না, একে জয় করতে হবে। আমার পরিবারের সবাই এখন সাহসের সাথে করোনা মোকাবেলা করছে।

ওই ভিডিও বার্তার শেষে তিনি করোনা ভাইরাস থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থণা করেন।

মেহেদুল করিম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তার বড় ভাই ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডারমাটোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মঞ্জুরুল করিম প্রিন্স ৬ মে এক ফেসবুক স্টেটাসে লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন রংপুরের করোনা আপডেট দিতাম। কিন্তু আজ দিতে পারিনি। অনেকে ইনবক্স করেছেন করোনা আপডেটের জন্য। আমি দুঃখিত, আমার ছোটভাই মো. মেহেদুল করিম, কমান্ড্যান্ট (এসপি), আর আর, এফ, রংপুর করোনা পজিটিভ হয়েছে আজ। করোনা এত তাড়াতাড়ি আমার পরিবারে চলে আসবে ভাবিনি।

তাছাড়া আমি যে এপার্টমেন্টে থাকি সেখানে ৩ জন পজিটিভ। নিজেকে মানষিকভাবে অনেক শক্ত মনে করলেও এখন মনে হচ্ছে সেই শক্তি কমে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ তায়ালা একমাত্র ভরসা। সকলের একান্ত দোয়া কামনা করছি। (বক্তব্যের হুবহু তুলে ধরা হলো)।

সূত্র জানায়, মেহেদুল করিম ২০১৬ সালে শেরপুর থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় পুলিশ সুপার হিসাবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি একই পদে শেরপুরে প্রায় সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। কর্মদক্ষতা ও সদালাপনের জন্য তিনি এখনও শেরপুরে প্রশংসিত। তার সময়ে শেরপুরে পুলিশ লাইন্স একাডেমি নামক একটি স্কুল প্রতিষ্টিত হয়। এর মাধ্যমে শিশুরা যেমন আধুনিক শিক্ষায় গড়ে ওঠছে। তেমনি বেকারত্ব ঘুচেছে অনেকের। এছাড়া তিনি জেলা পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনার আধুনিকায়তন করেন এবং পুলিশ বাহিনীর কাজ গতিশীল করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

চাকরি করতে গিয়ে তিনি কুড়িগ্রামেও সুনাম কুড়িয়েছেন। কুড়িগ্রাম থেকে তার বদলী ঠেকাতে ২০১৯ সালের ১৭ জুন খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা রংপুর মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। এ সময় সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীসহ তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশ নেন।

তিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে শেরপুরের অনেকেই আবেগ আর উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন।

আপলোড হওয়া ওই তৃতীয়তম ভিডিও পেইজ-এর কমেন্ট বক্সে অনেকেই মন্তব্য প্রকাশ করেন।

দোয়া ববি নামে একজন লেখেন, ধন্যবাদ ভাই এসময়ে আপনার এই ভিডিও আমার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেহেতু উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে বাইরে যেতেই হয়। মাঝে মাঝেই ভয় পাই আপনি সাহস যোগালেন। স্যালুট যোদ্ধা। দোয়া থাকল আপনাদের সবার জন্যে। আমাদের জন্যেও দোয়া করবেন।

এমডি শফিকুল ইসলাম শফিকুল নামে আরেকজন লেখেন, কর্মজীবনে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে যে ঝুঁকি আপনি নিয়েছেন এজন্য আপনাকে জানাই শতকোটি সালাম। করোনার এই যুদ্ধে পুলিশের ভুমিকা সত্যি প্রসংশনীয়। আল্লাহতালা আপনাকেসহ আপনার পরিবারের সকলকে এবং সকল পুলিশ ভাইকে দ্রুত সুস্থ্যতা দান করুক, আমিন।

তথ্য মতে, মেহেদুল করিমের জন্ম ১৯৭৩ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম (ফার্ম) কোর্স সম্পন্ন করেন। বিসিএস-এর ২০ তম ব্যাচের এই মেধাবী ২০০১ সালে পুলিশ বিভাগে যোগদান করেন ।