জামালপুরে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান নেই, জনমনে আতঙ্ক

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ জেলা কমিটির সভা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

জামালপুর জেলায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কড়া নজরদারিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। জেলায় এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হলেও বিদেশফেরত ব্যক্তিদের অবস্থান ও গতিবিধির সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় জনমনে করোনার ঝুঁকি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জামালপুর জেলায় কত সংখ্যক বিদেশফেরত ব্যক্তি অবস্থান করছেন তা প্রশাসন পুরোপুরি নির্শ্চিত হতে পারেনি। এ পর্যন্ত ২৫৮ জনকে হোম কায়ারেন্টিনের আওতায় এনেছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তথ্য গোপন করে অবস্থান ও অবাধ চলাফেরা করছেন এমন বিদেশফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনতে মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা চলছে। হোম কোয়ারেন্টিন না মানায় রোগ সংক্রমণ আইনে জেলার কয়েকটি স্থানে কয়েকজন বিদেশফেরত ব্যক্তিকে জরিমানাও করা হয়েছে। এ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে প্রায় এক হাজার ৮০০ জন বিদেশফেরত ব্যক্তিদের তালিকা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। সেই তালিকা সমন্বয় করে ইতিমধ্যে বিদেশ ফেরত ৫০০ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে যারা ১৪ দিনের কোয়ান্টিনের আওতায় আসার মতো।

২২ মার্চ সকালে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ জামালপুর জেলা কমিটির সভায় পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কাছে যে তালিকা আসছে তা নিয়ে কাজ করা খুবই কষ্টকর। এই তালিকা প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে আমরা বসে নেই। সেই তালিকা থেকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার মতো ৫০০ জনের একটি তালিকা করেছি। সেই তালিকা ধরে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনে আনার কাজ শুরু হয়েছে। সারা বিশ্বে করেনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে চলে আসা ব্যক্তিদের দ্বারাই যে কেউ যখন তখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। সেই শঙ্কা থেকেই তাদের প্রত্যেককে হোম কোয়ারেন্টিনে আনার কাজটাকেই এই মুহূর্তে সবচে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হবে বলেও তিনি জানান।

সভায় সিভিল সার্জন চিকিৎসত গৌতম রায় জানান, ২২ মার্চ সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় জেলার সাতটি উপজেলায় নতুন করে বিদেশফেরত ১৬৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সবার সহযোগিতায় এ নিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় বিদেশফেরত মোট ২৫৮ জন হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় এসেছেন। এর মধ্যে জামালপুর সদর উপজেলায় ২৬ জন, মেলান্দহে ৮৫, মাদারগঞ্জে ২৭ জন, দেওয়ানগঞ্জে ২৯ জন, ইসলামপুরে ৫০ জন, বকশীগঞ্জে ৩৩ জন এবং সরিষাবাড়ী উপজেলায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন আট জন।

সিভিল সার্জন আরো জানান, হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বিদেশফেরতদের মধ্যে কারো শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ এখনও পর্যন্ত দেখা দেয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুসারে জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্প এলাকায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ইউনিট ইতিমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া জামালপুর জেলা সদরে পৃথক একটি আইসোলেশন হাসপাতাল স্থাপনের নির্দেশনা এসেছে। ইতিমধ্যে সেই বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ শুরু করেছি। আইসোলেশন হাসপাতালটিও হবে মেডিকেল কলেজ প্রকল্প এলাকার অন্য একটি ভবনে। তিনি সবাইকে নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং বিদেশফেরত ব্যক্তি তার শরীরে করোনার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক তাদের সাথে মেলামেশা না করা, নিরাপদ দূরত্বে থাকা এবং তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, প্রত্যেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি জামালপুর জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ বিদেশফেরতদের নিয়ে কোনো সন্দেহজনক কিছু পেলে দ্রুত জানানোর আহ্বানের পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।