কম্পপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, হামলায় আহত মা হাসপাতালে

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রীর মা। ছবি : বাংলারচিঠিডটকম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
বাংলারচিঠিডটকম

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মো. সুজন নামের এক বখাটে যুবক প্রতিবেশী এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও নির্যাতন এবং তার মাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জামালপুর পৌরসভার কম্পপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই ছাত্রীর সহোদর ভাই বাদী হয়ে ওই বখাটে যুবকসহ চারজনকে আসামি করে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই ছাত্রীর মাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, জামালপুর পৌরসভার কম্পপুর গ্রামের ওই ছাত্রী এবার মেলান্দহ উপজেলার চরপলিশা জে এল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। প্রতিবেশী মো. রসুল ফকিরের বখাটে ছেলে সুজন (২৩) দীর্ঘদিন ধরে তাকে কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানা ভাবে উত্যক্ত করে আসছিল। নিরোপায় হয়ে তার পরিবার ২০১৭ সালের মার্চ মাসে জামালপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর থেকে বখাটে সুজন ও তার পরিবারের লোকজনরা ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে আসছিল। এসব কারণে ওই ছাত্রী নারায়ণগঞ্জে তার বাবার কাছে চলে যায়। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সে জামালপুরে কম্পপুরে নিজ বাড়িতে এসেছে।

ওই ছাত্রী ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উত্তর কম্পপুর গ্রামের তার এক নিকটাত্মীয়ের বাড়ি থেকে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নোটশিট নিয়ে বাড়িতে ফিরছিল। তার সাথে একজন নিকটাত্মীয় নারীও ছিলেন। পথে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বখাটে সুজন তার পথরোধ করে অশ্লীলভাষায় তাকে গালিগালাজ করে। এ সময় প্রতিবাদ করলে সুজন ও তার সাথে থাকা আরো চার-পাঁচজন যুবক ওই ছাত্রীকে গালে, মুখে ও বাহুতে কিলঘুষি মারে। এতে ওই ছাত্রী গুরুতর আহত হয়। এ সময় তার সাথে থাকা ওই নারী ফেরাতে গেলে তাকেও ধরে আটকে রেখে সুজন ও তার সহযোগীরা ওই ছাত্রীকে জোর করে জড়িয়ে ধরে তার শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজনরা ওই ছাত্রী ও সাথের নারীকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।

ওই ছাত্রী এ ঘটনা বাড়িতে তার মাকে জানায়। তার মা তাকে নিয়ে উত্যক্তকারী সুজনদের বাড়িতে বিচার চাইতে গেলে সুজন ও তার পরিবারের সদস্যরা তার মাকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় ওই ছাত্রী তার মাকে ফিরাতে গেলে হামলাকারীরা তাকেও টুটি চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ সময় মা ও মেয়ের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত মা ও মেয়ে দু’জনকেই ঘটনার দিনই সন্ধ্যায় জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে ওই ছাত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তার মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলায় তার ডান হাতের কব্জি ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানেও তিনি মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন।

এ ঘটনায় ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই ছাত্রীর সহোদর ভাই বাদী হয়ে দায়ের করা ওই মামলায় উত্যক্ত ও নির্যাতনকারী সুজন, তার বাবা মো. রসুল ফকিরসহ চারজনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো চার-পাঁজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী ওই ছাত্রীর ভাই অভিযোগ করে বলেছেন, থানায় অভিযোগ করে মামলা দায়েরের পর মামলার আসামি পক্ষের লোকজনরা নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তিনি আসামিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

জামালপুর সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, কম্পপুরের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ও নির্যাতন এবং তার মাকেও মারপিট করে গুরুতর আহত করার অভিযোগে বখাটে সুজনসহ চারজনের নামে এবং অজ্ঞাত আরো চার-পাঁচজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও ফৌজদারি দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম এই পাশবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, অনতিবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়ন সংঘের মানবাধিকার সংরক্ষণ প্রকল্প এই ঘটনায় নির্যাতিত পরিবারকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।