বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে আমাদের আত্মপরিচয় : ড. আতিউর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, জামালপুর
বাংলারচিঠিডটকম
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তবে অধিক ধনীদের হাতে অধিক অর্থ থাকার কারণে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রতিববন্ধকতার সৃষ্টি করছে। বাঙালির হাজার বছরের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম সবচেয়ে বড় অর্জন। অথচ ওই কালো টাকার মালিক লুটেরা গোষ্ঠীদের সহায়তায় পাকিস্তানী দোসররা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে শারীরিকভাবে হত্যা করে এক অন্ধকার যুগের সৃষ্টি করেছিল। ইতিহাসের সোনালী অধ্যায় মুছে ফেলে, সংবিধান কাটাছিঁড়া করে ওই কুলাঙ্গাররা মিথ্যা ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিল। গত এক যুগ ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর কাজে সক্ষম হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি জামালপুর মুক্তিসংগ্রাম যদুঘর আয়োজিত ‘আমার আত্মপরিচয়’ শিরোনামে এবং মাইকেল মধুসুদনের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে একক বক্তা হিসেবে ড. আতিউর রহমানের বক্তব্যের আগে চারজন শিক্ষার্থী তাঁর কাছে প্রশ্ন করেন ‘অর্থ কী আসলেই অনর্থের মূল নয়? আগে মানুষ নদীপাড়ে বাড়ি করতো এখন কেনো রাস্তার পাশে বাড়ি বানায়? আপনার সফলতার পিছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশী? আমার আত্মপরিচয় মানে কী? উত্তরে সাবলির ভাষায় ড. আতিউর রহমান উত্তরে বলেন, অর্থ শুধু অনর্থের মূল না ভালো কাজের জন্যেও অর্থের প্রয়োজন হয়। তবে অবৈধভাবে যারা টাকা আয় করেন তারাই অনর্থ কাজে অর্থ ব্যয় করে আমাদের উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করেন। আমরা কৃষকের কাছে ব্যাংক সেবা নিয়ে যেতে মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলে টাকার স্বাভাবিক গতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
অপর পশ্নে জবাবে বলেন, নদী মরে গেলে আমাদের সভ্যতা মরে যাবে, আমাদের মানবতা মরে যাবে। তাই নদী রক্ষা করতে হবে। তবে তিনি বলেন, আগে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নদী পথ। তাই নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো। এখন রাস্তাঘাটের উন্নতি হওয়ায় মানুষ সড়কের পাশে বাড়ি তৈরি করে।
তাঁর সফলতার পিছনে বড় অবদান রেখেছেন তাঁর মা এবং সমাজের মানুষ। এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও ভূমিকা আছে। তিনি মানসম্মত শিক্ষা আন্দোলন সফল করতে হলে ভালো ভালো শিক্ষক গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের আত্মপরিচয় খুঁজতে হলে হাজার বছরের বাঙালি এবং বঙ্গবন্ধুকে পাঠ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে হাজার বছর ধরে যারা আজকের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন তাদের জানতে হবে। আমাদের নদী, ফুল, পাখি, সংস্কৃতি, সভ্যতা, ইতিহাস পাঠ করে জানা যাবে আত্মপরিচয়। মুক্তিসংগ্রাম যাদুঘর আত্মপরিচয় জানার বিশাল একটা জায়গা করে দিয়েছে।
তিনি সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষে সারা বছর ধরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের উদাত্ত আহ্বান জানান। ছয়জন শিক্ষার্থীর মাঝে তাঁর রচিত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই উপহার দেন।
মঞ্চে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আতিকুর রহমান ছানা, মুক্তি সংগ্রাম যাদুঘরের পরিচালক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক উৎপল কান্তি ধর, বিশিষ্ট রাজনীতিক আব্দুল মান্নান ভাষানী, নারীনেত্রী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, বিশিষ্ট নাট্যকার আসাদুল্লাহ ফরাজি, বাংলারচিঠিডটকম এর সম্পাদক মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি সাযযাদ আনসারী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিসংগ্রাম যাদুঘরের ট্রাস্টি দোদুল সরকার। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন মুক্তিসংগ্রাম যাদুঘরের ট্রাস্টি হিল্লোল সরকার।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের গল্প, মাইকেল মধুসুদন দত্তের কবিতা আবৃত্তি, গান পরিবেশন এবং মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার মানুষ উপস্থিত থেকে পুরো অনুষ্ঠান মনোযোগের সাথে উপভোগ করেন।