প্রখ্যাত ফটো সাংবাদিক অজিত সোম কানু আর নেই

অজিত কুমার সোম কানু

॥ শোয়েব হোসেন ॥
জামালপুরের প্রখ্যাত ফটো সাংবাদিক অজিত কুমার সোম কানু আর নেই। ৮ জানুয়ারি বিকাল পাঁচটার দিকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ৮০ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রবীণ এই সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

সাংবাদিক অজিত কুমার সোম কানু ১৯৪০ সালের ১৪ আগস্ট শহরের আমলাপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা স্বর্গীয় দেবেন্দ্র কুমার সোম। তাঁর পরিবারটি ছিল পুরোপুরি একটি শিল্পী পরিবার। কানু’দার কণিষ্ঠ ভাই বীরেন সোম দেশের একজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী। তাঁর ছেলে বিশ্বজিত সোম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বিএফএ ডিগ্রি নিয়েছেন। চিত্রশিল্পী বিশ্বজিত সোম বর্তমানে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনিও ইতিমধ্যে তার কাজের মাধ্যমে সুনাম কুড়িয়েছেন।

জামালপুরবাসীর কাছে অজিত সোম কানু পরিচিত ছিলেন কানু’দা নামে। ১৯৫৬ সালে মেট্টিক পাশ করার ২ বছর আগে ১৯৫৪ সালে স্কুলে পড়ার সময়েই শখের বশে ক্যামেরা হাতে তুলে নেন কানু’দা। ১৯৬২ সালে ইত্তেফাকে ছাপা হওয়া ‘ঝরাপাতার গান’ নামে কানু’দার একটি ফটোফিচার ব্যাপক আলোড়ন তুলে। চৈত্রমাসে পাতা ঝরে যাওয়া এক পত্র পল্লবহীন শীর্ণ এক বটবৃক্ষের ছবি। ‘ঝরাপাতার গান’ নামে আবেগময় ধূসর ক্যাপশনে ছাপা হয় ইত্তেফাকে কানু’দার নামে। ছবির ক্যাপশন লিখেছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী নিজে। ইত্তেফাক ছাড়াও আজাদ, মিল্লাত, সংবাদে কানু’দার প্রচুর ছবি ছাপা হয়েছে। সে সময়ের স্থানীয় সাংবাদিকরা কানু’দার ছবির উপর নির্ভরশীল ছিল। শহীদ সাংবাদিক আহসান উল্লাহ, সুরুজ চৌধুরী কানু’দার নিকট থেকে প্রয়োজনীয় ছবি নিতেন। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্ত ফ্রন্টের নির্বাচন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন, ’৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ প্রতিটি ইতিহাসের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী কানু’দা ইতিহাসের সব খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের ছবি তুলেছেন, দেখেছেন খুব কাছ থেকে। ’৫৪ সালে নির্বাচনী প্রচারে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক জামালপুর এলে কানু’দা তার ছবি তুলেন। ব্যক্তিগতভাবে কানু’দা পরিচিত ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে ইতিহাসের সব ডাকসাইটে নেতার সাথে।

কিছুদিন আগেও জামালপুরের কর্মরত সংবাদকর্মীরা পুরোপুরি কানু’দার উপর নির্ভরশীল ছিল। ফটো সাংবাদিক কানু’দা অনেকটা বিনে পয়সায় সাংবাদিকদের ছবি দিতেন। তাই সাংবাদিকরা আজীবন গভীর ঋণে দায়বদ্ধ থাকবেন কানু’দার নিকট। মৃত্যুকালে অজিত সোম কানু এক ছেলে ও ৬ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

তথ্য সূত্র : অজিত সোম কানুকে নিয়ে জামালপুরের প্রয়াত সাংবাদিক শফিক জামানের লেখা থেকে সংগৃহিত।