বাংলাদেশে আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না : তথ্যমন্ত্রী

বাংলারচিঠিডটকম ডেস্ক : তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ১ জানুয়ারি বলেছেন, বাংলাদেশে আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না। নির্বাচনই হবে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পদ্ধতি। তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ কয়েকটি দল আওয়ামী লীগ এবং দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে, ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২০ সালের প্রথম দিনে গত এক বছরে মন্ত্রণালয়ের অর্জন এবং এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

বিএনপিনেতা সেলিমা রহমানের একটি বক্তব্যের জবাবে হাছান বলেন, ‘দেশবাসী ও আমরা বিগত ১১ বছর ধরে সরকার উৎখাতের এ ধরনের হুমকি শুনে আসছি। কিন্তু আমি তাদেরকে বলতে চাই যে নির্বাচনই সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতি যদি দেশের মানুষের সমর্থন না থাকে তবে, দলটি ক্ষমতা ছেড়ে যাবে। যদিও তারা বিশ্বাস করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়।’

নতুন তথ্যসচিব কামরুন নাহার ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার এসময় উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে যদি জনগণ আমাদের দলকে সমর্থন না জানায়, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আমরা সরকারে থাকবো না। এছাড়া অন্য কোন পথ তো নেই।’

হাছান বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে অতীতের মতো আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সফল হবে না এবং সরকারকে বিদায় দেয়ার একটিই পথ-সেটি হচ্ছে নির্বাচন।’

বিরোধী দলকে স্পেস দেওয়া প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সমাজেই বসবাস করি। এখানে বিরোধী দল সব সময় আইনগত ভাবেই তাদের মত প্রকাশ, প্রতিবাদ করে আসছে। সাংবিধানিকভাবে যে অধিকার, সেই অধিকার সবসময় প্রয়োগ করছে। এখানে কাউকে অধিকার দেয়ার বিষয় নেই।’

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসিতে আমরা বিশ্বাস করি এবং সেই অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং এখানে বিরোধী দল সব সময়ই সংসদে, সংসদের বাইরে তাদের মত প্রকাশ করছে। সুতরাং অধিকার দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর।’

‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেবার বিষয়ে কিছু বলেননি’ এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. হাছান বলেন, ‘দক্ষিণের মেয়রের বক্তব্য আমি শুনেছি। মেয়র বলেছেন, মন্ত্রীর মর্যাদায় তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রীর মর্যাদা থাকলে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে। সেই বিধিনিষেধের কথাই তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।’

তথ্যমন্ত্রী এ সময় সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘গত প্রায় একটি বছর আমি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছি। বিগত বছরে অনেক কাজ আমরা সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছি। অনেকগুলো কাজ আমরা হাতেও নিয়েছি। অনেকগুলো কাজ আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কয়েক যুগে হয়নি বা এক যুগেও হয়নি এমন কাজ, যেমন ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল কয়েক যুগ আগে থেকে, কিন্তু সেটি সম্ভবপর হয়নি। গত বছর ২ সেপ্টেম্বও থেকে দুরদর্শনের ফ্রি ডিশের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে অফিসিয়ালি বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রদর্শিত হচ্ছে। গত বছরে কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।’

ড. হাছান বলেন, ‘এক যুগেরও বশি সময় ধরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্রম নির্ধারণের জন্য বারংবার তাগাদা দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে, কিন্তু সেগুলো বাস্তাবায়ন করা সম্ভবপর হয়নি। এখন ইতোমধ্যেই টেলিভিশন প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী প্রদর্শিত হচ্ছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন ‘বিদেশি টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশি বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছিল, সেটি আমরা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি, অনেকগুলো টেলিভিশনে বিদেশি সিরিয়াল কোনো অনুমতি ছাড়া প্রদর্শিত হচ্ছিল, যেটি আমরা একটি নিয়ম নীতির মধ্যে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি, এখন একটি কমিটির মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে সেগুলো প্রদর্শিত হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি অবৈধ ডিটিএইচ সংযোগ অনেক জায়গায় সেগুলো চালু ছিল, আমরা ঘোষণা করেছিলাম প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে এগুলো সরিয়ে নিতে হবে। পরে আমরা সময় বৃদ্ধি করেছিলাম আমাদের কাজের সুবিধার্থে যেহেতু ১৬ তারিখে বিজয় দিবস ছিল এবং অন্যান্য কাজ সেগুলোর সুবিধার্থে।’

তিনি বলেন, আজকে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ডিস সংযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। জেলার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে এ ব্যাপারে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ওপর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় একটি ছবি নির্মিত হচ্ছে। এই ছবির কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে। খুব সহসা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মতো বেতারও ভারতে সম্প্রচারিত হবে। আমরা আশা করছি এ মাসের মধ্যেই এটি করতে আমরা সক্ষম হবো।’

ড. হাছান আরো জানান, ‘চলচ্চিত্র শিল্পীদের দাবি ছিল একটি কল্যাণ ট্রাস্ট করা। সেই কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা লক্ষে ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটি আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব সহসা এটি সংসদে পাঠাবো।’

তিনি বলেনর, ইতিপূর্বে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এক বছর পিছিয়ে ছিল। এটি হালনাগাদ করা হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ১৮টি আইন, বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও হালনাগাদের কাজ চলছে। খুব সহসাই গণমাধ্যমকর্মী আইন আমরা মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাব বলে আশা করছি।’

ড. হাছান বলেন, ‘৬৪টি জেলা আধুনিক তথ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য একটি ডিপিপি তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে একটি করে সিনেমা হলও থাকবে। যে হলগুলো আমরা লিজ আউট করতে পারবো, সিনেমা প্রদর্শনসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইনে কিছু সংশোধনের দরকার ছিল সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে, সাংবাদিক ভাই-বোনদের দাবি অনুযায়ী। এটি আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, পাওয়া মাত্রই আমরা সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিব। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের পর সেটি সংসদে যাবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইন গণমাধ্যমে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা সব রিপোর্ট এখনো পাইনি। পেলে খুব সহসাই কিছু অনলাইন নিবন্ধন পেয়ে যাবে।’সূত্র:বাসস।